দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

চাল নিয়ে চালবাজি: ধান নেই তবুও চালের নাম তার মিনিকেট

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: ধান নেই, আছে পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন, তবুও মিনিকেট নামে চাল বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। এবার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে সরকার।ধান নেই তবুও চাল। এমনকি বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত চালের অন্যতম এই মিনিকেট। ছাঁটাইয়ের কারণে এর পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নামীদামি কোম্পানিগুলোও এই চাল বিক্রির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ অবস্থায় সরকার বলছে, মিনিকেটের ব্র্যান্ডিং দেশে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করবে তারা।

অটোমেটিক মেশিনে মোটা চাল ছাটাই হয়ে পড়ছে চাল। দেখতে চিকন, ফর্সা এবং চকচকে। নাম দেয়া হয়েছে মিনিকেট। আর এই চালে এখন বাজার সয়লাব।

আড়াই দশক ধরে মিনিকেট চাল বাজারে তার আধিপত্ব ধরে রেখেছে। চিকন চালের মধ্যে দাম সবচে কম-তাই ভোক্তাদের কাছে কদর বেশি। তবে, অনেকেই জানেন না এই নামে কোনো ধান নেই। এমনকি বিজ্ঞানীরাও এ নামের কোনো ধান আবিষ্কার করেননি।

দীর্ঘদিন ধরে বাজারে পাইকারি দরে মিনিকেট সরবরাহ করে আসা ব্যবসায়ীরাও জানেন না এই চাল কিভাবে তৈরি হচ্ছে। অন্যান্য চালের বস্তায় ধানের নাম দেয়া থাকলেও মিনিকেট চালে তা নেই। কেউ কেউ জানালেন, ব্রি ২৮ ধানের চাল ছেঁটে তৈরি হচ্ছে মিনিকেট।

ব্যবসায়ীরা বলেন, যেসব এলাকা থেকে চাল আসে ওইসব এলাকায় মিনিকেট ধান আছে কি না আমরা জানি না। বস্তার মধ্যে লেখা দেখেই আমরা কিনে থাকি, কাস্টমাররাও নিতে চায়। আগে থেকেই মিল থেকে এভাবে বস্তার মাধ্যমেই মিনিকেট চাল আসে আমাদের কাছে। আমরাও এভাবেই বিক্রি করি।

এখন দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও বাজারে আনছে মিনিকেট চাল। নানা মোড়কে মুড়িয়ে করা হচ্ছে ব্র্যান্ডিং। ব্যবসায়িক লাভের আশায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই চালের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় নেই কেউ।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, কেমিক্যাল মেশানো ও অতিরিক্ত ছাঁটাইয়ের কারণে মিনিকেট চালে শুধু শর্করা ছাড়া আর কোনো পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে। এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চাল মানব শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কনসালটেন্ট কৃষিবিদ কেশব লাল দাশ বলেন, যে চালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যত বেশি, সেই চাল ডাইবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হলে যেটা বাদামি চালে আছে তাতে রক্তের শর্করা আস্তে আস্তে বাড়ে। সাদা চালের ভাত খাওয়াতে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

অনেকদিন পরে হলেও মিনিকেট নামের চালের বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মিনিকেট নামের কোনো ধান না থাকায়-এ নামের চাল বাজারজাতকরণ অবৈধ বলছে তারা। ঘোষণা এসেছে চালের প্যাকেট এবং বস্তার গায়ে ধানের জাত লিখতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, মুখে বলে দিলেই যে বস্তার গায়ে লেখা হবে এমনটা হতে দেয়া হবে না। আমরা আইন করে দিচ্ছি যে কতটুকে তারা ছাটাই করবে আর কোন নামে বিক্রি করবে।

মিলে কোন ধানের চাল ছেঁটে কোন জাতের চাল বলে বস্তা বা প্যাকেটজাত করা হচ্ছে সেটা তদারকি করলেই শুধু মিনিকেটের মতো চাল বিক্রি ও বাজারজাত করা বন্ধ করা যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

/একে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close