প্রধান শিরোনামসাক্ষাৎকার
চামড়া ৩০০, জুতা ৩ হাজার টাকা? বিটিএ’র সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাৎকার
চামড়া'র বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকা অর্থনীতির বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ রিফাত মেহেদী'র সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ
চামড়ার দাম নিয়ে খোলামেলা আলাপচারিতা হয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ’র সাথে। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে কেন চামড়ার বাজারের এই দূরবস্থা, হেমায়েতপুরে ট্যানারী পল্লী স্থানান্তরের গল্প, ট্যানারী মালিকদের চাওয়া পাওয়ার গল্প।
ঢাকা অর্থনীতির পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত উল্লাহ’র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিফাত মেহেদী। সাক্ষাৎকারের চৌম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলঃ
ঢাকা অর্থনীতিঃ “চামড়ার দাম ৩০০ টাকা অথচ জুতার দাম ৩০০০ টাকা” সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের এমন বক্তব্যকে কেমন ভাবে দেখেন?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে চামড়া অনুযায়ী কিছু ক্যাটাগরি আছে। যে চামড়া গতবছর আমরা বিক্রি করেছি ১ ডলার ৮০ সেন্ট দামে, সে চামড়া বর্তমানে ৭০ সেন্ট থেকে ১ডলার ১০ অথবা ২০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। ১ ডলারের মূল্যের চামড়ার দাম পাচ্ছি মাত্র ৭০-৭৫ সেন্ট। গত বছরের তুলনায় সবক্ষেত্রে প্রায় ৪০ শতাংশের মতো দাম কমেছে। চাইলে এইসব তথ্য আমরা যেকাউকে প্রমাণসহ দেখাতে পারবো। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় আমাদেরও দাম কমাতে হয়েছে।
ঢাকা অর্থনীতিঃ শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে চামড়া কিনলেও যে ক্ষতি হয়েছে তা কি আদৌ পোষানো সম্ভব?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ কোরবানীর প্রায় ১০-১৫দিন পর থেকে আমরা চামড়াগুলো সংগ্রহ শুরু করি। চামড়ার সাথে ভালোভাবে লবণ মিক্সড হওয়ার জন্যে আমরা এই সময়টা নিয়ে থাকি। এবার বিভিন্ন সমস্যার কারনে আমরা ২০ আগস্ট থেকে চামড়া সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা এখন ১৭ আগস্টে নিয়ে এসেছি। যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। তবুও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো বলে মনে হচ্ছে।
ঢাকা অর্থনীতিঃ অনেকে অবিক্রিত বা ভালো দাম না পাওয়ায় চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে। এই বিষয় কিভাবে দেখছেন?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ দুইটা কারন হতে পারে। এক, যারা মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ করে তারা হয়তো অধিক মুনাফার লোভে কম দামে চামড়া কিনেছে। দুই, অনেকেই চামড়া কেনার পরে অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন জায়গায় চামড়াগুলো বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিক্রি না করতে পেরে যখন চামড়ার মান নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তখন অনেকে মাটিতে, রাস্তায় চামড়া ফেলে চলে গেছে।
ঢাকা অর্থনীতিঃ প্রান্তিক পর্যায়ে ক্রেতাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের ক্ষতিটা কেমন হয়েছে বলে মনে করেন? এই ক্ষতি কি পোষানো সম্ভব?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ কারো ক্ষতিই পোষানো সম্ভব না। বছরের প্রায় ৫০ শতাংশ চামড়া আসে কোরবানীর ঈদ থেকে। প্রতি বছরের মত এই ঈদে গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া সব মিলিয়ে প্রায় ৮০- ৮৫ লক্ষ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ছিলো আমাদের। আশা করছি আমরা লক্ষমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারবো।
ঢাকা অর্থনীতিঃ প্রান্তিক পর্যায়ে দুই-তিন বছর ধরে চামড়ার দাম কেন কমছে? এই বিষয়ে আপনাদের কিছু করার আছে কি?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ এইটা কখনোই আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা সারা বছর চামড়া কিনি। যারা আমাদের কাছে নিয়মিত চামড়া বিক্রি করে তাদের সাথে দাম নিয়ে কথা বলতে হয়না। কিন্তু কোরবানীর সময় সারাদেশে এতোগুলা চামড়া সরাসরি আমাদের পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। সেজন্যেই আমরা প্রতিবছর চামড়ার দাম বেঁধে দিয়ে থাকি। কিন্তু তারপরেও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়না।
ঢাকা অর্থনীতিঃ সম্প্রতি কাঁচা চামড়ার বিদেশে রপ্তানীর অনুমতি দিয়েছে সরকার। বিষয়টা আপনাদের জন্যে কতটা সুফল বয়ে আনবে?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ ট্যানারি শিল্প সাভারে হস্তান্তরের পরে অনেক কারনেই আমরা আগের মতো ব্যবসায় সফলতা পাইনি। শত শত শ্রমিক, হাজার হাজার কোটি টাকার আমাদের পুঁজি রয়েছে এই ব্যবসায়। এমতাবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। আমরা আশা করি, দেশের ট্যানারি শিল্প রক্ষায় সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
ঢাকা অর্থনীতিঃ বাংলাদেশের শিল্পও টিকে থাকবে আবার প্রান্তিক বিক্রেতারাও ভালো দাম পাবে কিভাবে? কোন পথ কি রয়েছে?
সাখাওয়াত উল্লাহঃ আছে। সহযোগিতা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলো থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাই না। সম্পূর্ণই আমাদের নিজস্ব অর্থায়ন। পাশাপাশি আমাদের জন্যে বরাদ্দকৃত প্লটও আমরা এখনো বুঝে পাইনি। পেলে হয়তো আমরা ব্যাংক ঋণের জন্যে আবেদন করতে পারতাম। এখন দেশের এই শিল্প রক্ষায় প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। যদি ব্যাংক থেকে আমরা কিছু সহযোগিতা পাই, তাহলে এই ভবিষ্যৎ বিপদ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
/আরএম