আমদানি-রপ্তানীশিল্প-বানিজ্য
চামড়া রপ্তানি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় মন্ত্রণালয়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কোরবানির পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দর বিপর্যয়ের পর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত ঐ সিদ্ধান্তে অনড় থাকা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করলে দেশীয় শিল্পের স্বার্থে ঐ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে’।
তিনি বলেন, নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হলে আমরা হয়তো রপ্তানি করতে দিবো না। অন্যথায় কেস টু কেস ভিত্তিতে ওয়েট ব্লু (কাঁচা চামড়ার পশম ও ঝিল্লি ছাড়ানোর পর যে অংশ থাকে) রপ্তানির সিদ্ধান্ত থাকতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাঁচা চামড়ার বাজারে ভারসাম্য আনতে ও সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষা করতে চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত হবে না। কেননা ট্যানারি মালিকদের হিসাবেই এখনো অর্ধেক চামড়া অবিক্রিত রয়ে গেছে। ফলে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আগামীকাল রবিবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঐ বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনতে শুরু করছেন ট্যানারি মালিকরা। রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেওয়ায় অতীতের মতো যেনতেন মূল্যে চামড়া কেনার পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও ট্যানারি মালিকরা চামড়া রপ্তানির বিপক্ষে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ট্রেজারার মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে লাভবান হবে আড়তদাররা। তারা কিনেছে নামমাত্র দামে। এখন বিক্রি করবে অনেক বেশি দামে। ইতিমধ্যে তারা শক্ত অবস্থানে চলে গেছে। বলেছে, শতভাগ নগদ টাকা ছাড়া কোনো চামড়া বিক্রি করবে না। রপ্তানির সিদ্ধান্তে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পাবে। গতবারের অর্ধেক চামড়া অবিক্রিত থাকা সত্ত্বেও এবার বাড়তি চামড়া রপ্তানিতে আপত্তি কেন – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবিক্রিত থাকা চামড়ার একটি অংশের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে।
অবশ্য চামড়া রপ্তানির বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের মালিকরা রপ্তানির বিপক্ষে। আমরাও স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ বিবেচনা করে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন দেখলাম দাম পড়ে গেছে। এখন চামড়া নষ্ট হওয়ার চাইতে যাতে দুইটা পয়সা আয় হয়, সেজন্য রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
অবশ্য চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতনে যেসব উপকারভোগী বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের জন্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা তহবিল থেকে বিকল্প উপায়ে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।