দেশজুড়ে
চলছে একদফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আজ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ’ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শুরুতে ৯ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন।
শনিবার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এক দফা দাবিতে রোববার (৪ আগস্ট) সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ শুরু হবে।
কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবিতে আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-তরুণরা সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের হায়েনারা আমাদের বোনদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দমন-পীড়নের কাজে লাগিয়ে সারা দেশে ছাত্রদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। যার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দেখেছি, সরকার শাটডাউন কর্মসূচিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন শুরু করেছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে নামিয়ে কারফিউ জারি করা হয়।’
সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ‘সেই রাতে আমরা কারফিউ ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ঘোষণা কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। ১৯ জুলাই আমাদের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। আমাদের জবরদস্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেয়। আমাদের হাসপাতালে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সেটিও না পেরে আমাদের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে জোর করে আমাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের বক্তব্য বিশ্বাস না করে রাজপথ দখলে রেখেছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সমন্বয়কদের অনশনের কারণে সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, খুনের হিসাবটা পর্যন্ত আমরা পাইনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এই সরকার মানুষ খুন করেছে এবং লাশও গুম করেছে। যারা খুন করেছে তারা কীভাবে সেই খুনের বিচার করবে? আমরা এই সরকারের কাছে খুনের বিচার প্রত্যাশা করি না।’
সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ‘আমরা আজ এক দফার দাবিতে এখানে হাজির হয়েছি। আমরা জীবনের নিরাপত্তা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এক দফার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। সরকার এখন বলছে আলোচনার জন্য গণভবনের দরজা খোলা রয়েছে।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, তিনি আগেই বুঝে গিয়েছেন যে গণভবনের দরজা খোলা রাখতেই হবে। আমরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, দেশে যত খুন-গুম হয়েছে তার দায়ে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা নয়, পুরো মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে বিনাশ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনোই কোনো স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।’
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের এক দফা হলো শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিদায়। এই সরকারের লুটপাট ও গণহত্যাসহ সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। সব রাজবন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে জেল ভেঙে আমাদের ভাইদের মুক্ত করে নিয়ে আসবো। আমরা জনগণকে বলতে চাই, আপনারা স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে যোগ দিন। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হন। আমরা খুব দ্রুতই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্র সংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা শিগগির আপনাদের সামনে ঘোষণা করবো। আমরা জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারকে কোনো ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থর করব না। যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ দেওয়া হয় তা আমরা প্রত্যাখ্যান করব। আমরা প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করব। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ ও রাজপথের কর্মসূচি পালন করবেন। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন। নিরাপত্তাবাহিনী, সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা সবার কাছে আহ্বান থাকবে, জনগণ যদি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, সরকার যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, সেই সরকারের হুকুম মানতে আপনারা আর বাধ্য নন। সরকারকে সমর্থন না দিয়ে আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। আমাদের মিছিলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা হুকুমের আসামির বিচার চাই, আপনাদের কেন খুন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা সব গণহত্যার বিচার করবই।’