প্রধান শিরোনাম

চট্টগ্রামে উদ্বোধন হলো দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ উড়ালপথ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে নগরীর টাইগারপাস পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এ এলিভেটেড র্ভাচুয়ালি মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একটি স্বদেশি যোগাযোগ কাঠামোর প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই প্রকল্পটি পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়নি।

এক্সপ্রেসওয়ের নকশা তৈরি ও নির্মাণ থেকে শুরু করে সব কিছু দেশীয় জনবল ও সম্পদ ব্যবহার করে করা হয়েছে। দেশের সাম্প্রতিক বড় নির্মাণ কাঠামোগুলোর মধ্যে একে এককথায় একটি স্বদেশি অবকাঠামো বলা যায়। মাত্র চার বছর ৯ মাসে এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এত কম সময়ে কাজ শেষ করার বিষয়টিও নজির হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কে তিনটিসহ মোট চারটি উড়াল সেতু-ওভারপাস চালুর পর এবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হতে যাচ্ছে। এটি এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ উড়ালপথ।

এটি সাড়ে ১৬ মিটার প্রস্থের চার লেনের সড়ক। উদ্বোধনের পর এক্সপ্রেসওয়েতে দু-তিন ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরোপুরি যান চলাচল শুরু হতে আরো দুই মাসের মতো অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মূল সড়কের অবশিষ্ট অংশ নগরের টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত (এক কিলোমিটারের একটু বেশি) নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর আগামী মাসের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে মূল এক্সপ্রেসওয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

এক্সপ্রেসওয়ে বাদে সিডিএর অন্য দুটি প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সড়ক ও সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক প্রকল্প জানে আলম দোভাষের নামে অনুমোদিত হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এসব র‌্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য ৫.৬৪ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়ে ও ১৪টি র‌্যাম্প মিলে এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২০.৭৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কর্মকর্তারা জানান, মূল এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ১৪টি র‌্যাম্পের নির্মাণ শুরু হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, র‌্যাম্প ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেস চালু হলেও এর আংশিক সুফল মিলবে। র‌্যাম্প চালু হলে পুরো সুফল মিলবে। গণপরিবহনের জন্য টোল সহনীয় পর্যায়ে রাখা হলে নগরের যানজট অনেক কমে আসবে।

সিডিএ থেকে জানা যায়, ঢাকার মতো চট্টগ্রামের এই এক্সপ্রেসওয়েতেও টোল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। তবে এখনো টোলের হার নির্ধারণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ গতকাল সোমবার বলেন, ‘নগরের লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেতে যানজটের কারণে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। আবার অনেক সময় এর চেয়েও বেশি লাগে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট।’

যান চলাচল কখন শুরু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার অংশে এক কিলোমিটার এলাকায় মূল ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার পর সিসিটিভি, লাইটিংসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ করতে হবে। ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে তা খুলে দেওয়া হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে আটটি ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে নগরবাসী।

সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে শহরের নতুন রোড নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে অবস্থিত সিইপিজেড, কেইপিজেডের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় শহরের ভেতরে যানজট কমবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ২০ মিনিটে যাত্রীরা বিমানবন্দরে যেতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের যানজট সমস্যা কমবে। মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতের সময় সাশ্রয় হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়বে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ১৪টি র‌্যাম্পের নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র হয়ে গেছে। আগামী মাসে এসব র‌্যাম্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত আছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফাস্ট্রাকচার।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৪টি র‌্যাম্পের মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি ও কেইপিজেড এলাকায় থাকবে দুটি।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

প্রকল্পে নকশা পরিবর্তন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মধ্যে মূল উড়াল সড়ক ১৫.১১ কিলোমিটার এবং ১৪টি র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য ৫.৬৪ কিলোমিটার মিলে দৈর্ঘ্য ২০.৭৫ কিলোমিটার হয়। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে তিন হাজার ৪৬২ কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার টাকা। আগামী বছর জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

মূল এক্সপ্রেসওয়ের বাকি এক কিলোমিটার কাজের (টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার) ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, র‌্যাম্প তৈরি করতে বেশি সময় লাগবে না। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে করা না গেলে অতিরিক্ত কয়েক মাস সময় বাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ কাজী হাসান বিন শামস গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নগরের বড় একটি অংশের যানজট অনেকাংশে কমবে।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি চালু হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। অর্থনীতি আরো চাঙা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close