প্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ডলারের তেজিভাব শেষ। দাম কমছে নিয়মিত। সোনার বাজারেও পতন হয়েছে। তবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়। ৮৪-৮৫ টাকার ডলার ৯০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়। তবে কয়েকদিন ধরে ডলারের সেই তেজিভাব আর নেই। একই সময় বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশে সোনার দর ভরিপ্রতি ১০ হাজার টাকার বেশি বৃদ্ধি পায়। সোনার দর বাড়তে থাকলেও হঠাৎই তার পতন হয়েছে। ডলারের তেজিভাব ও সোনার বাজারে পতন হলেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। ঈদের পর দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ও লেনদেন প্রতিদিন বাড়ছে।

জানা গেছে, মার্চ থেকে করোনাভাইরাসের মধ্যে বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমদানির জন্য ডলারের দর ওঠে রেকর্ড পরিমাণ। আগে ডলারের সংকটের মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাবে আরও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডলার সংকটের কারণে একাধিক ব্যাংক এলসি খুলতে পারেনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ডলার বিক্রি করেও সংকট মেটেনি। ফলে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার ডলারের দর পৌঁছে যায় ৯০ টাকার কাছাকাছি। কোনো কোনো ব্যাংকে ৯০ টাকা দিয়েও ডলার কিনতে পারেননি ক্রেতারা। তবে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে সেই পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টে গেছে। গতকাল বেশির ভাগ ব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৬ টাকায়; যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকার কাছাকাছি। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকায়। আগের সপ্তাহে একই ব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৮ টাকায়। এমন পরিস্থিতি দেশের সব ব্যাংকে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি ছিল। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকায় নগদ ডলার পাওয়া যায়নি। তবে গত দুই মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসায় ডলারের ঘাটতি কমে গেছে। এ কারণে ডলারের তেজিভাব এখন আর নেই।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে টানা উত্থান হয় সোনার দরে। তবে ৭ আগস্টের পর আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছে সোনার দামে। আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল এক দিনেই প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ১১৭ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১০ হাজার টাকা। বাজারে প্রতি আউন্স সোনা বিক্রি শুরু হয় ২ হাজার ২৭ ডলারে আর দিন শেষ হয় ১ হাজার ৯১০ ডলারে। ৭ আগস্ট নিউইয়র্ক থেকে পড়তে শুরু করে সোনার দাম। ওই সময় প্রতি আউন্স সোনা বিক্রি হয় ২ হাজার ৬১ ডলারে। ওই দিন কমতে কমতে ২ হাজার ১৮ ডলারে নামে প্রতি আউন্স সোনার দর। ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে এ দরেই সোনার কেনাবেচা হয়। ৯ আগস্ট দর আরও কমতে থাকে। দেশের বাজারে অস্থির হয়ে পড়া সোনার দাম কমে যেতে পারে কয়েকদিনের মধ্যেই। দেশের বাজারে সব ধরনের সোনার দাম ৪ হাজার ৪৩২ টাকা করে বেড়েছে। সবচেয়ে ভালোমানের সোনার দাম ওঠে ভরিপ্রতি ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায়। জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্সের দাম ২ হাজার ৩৬ ডলারে ওঠে। এ সময় বাংলাদেশেও সোনার দাম বেড়ে যায়। তবে এখন আবার পতনের দিকে যাচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি প্রতি গ্রাম সোনার দাম ৩০০ টাকা কমিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি গ্রাম সোনার দাম ছিল ৬ হাজার ৬২০ টাকা; গতকাল তা ৬ হাজার ৩২০ টাকা করা হয়েছে।

ডলার ও সোনার দামে এমন পতনের মুখেও দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন এখন হাজার কোটি টাকার বেশি হচ্ছে প্রতিদিন। একই সঙ্গে বাড়ছে সূচকের গতি। সর্বশেষ গতকালের লেনদেনে দেখা গেছে, ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার বেশি। সূচক বেড়েছে ১০০ পয়েন্ট। আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সব সূচক বেড়েছে। লকডাউনের প্রভাবে শেয়ারবাজারে লেনদেন ছিল ৫০ কোটি টাকার নিচে। ঈদের ছুটির পর লেনদেনে চাঙ্গা হয়ে উঠছে শেয়ারবাজার। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার বেশি; যা চলতি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময়ে সর্বোচ্চ। যদিও এর আগে দুটি কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের কারণে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় এক মাস আগে। ডিএসইতে ঈদুল আজহার ছুটির পর প্রথম দিন ৩ আগস্ট ৬০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এর পর প্রতিদিনই লেনদেনের হার বাড়তে থাকে।

চলতি সপ্তাহের তিন দিনে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন ছাড়িয়েছে। প্রথম দিন রবিবার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১২ কোটি, সোমবার ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গতকাল হয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এ তিন দিনে সূচক বেড়েছে ২৭০ পয়েন্টের বেশি। গতকালের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৪৬৩৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারির পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসে। সূচকের উত্থানের সঙ্গে দিনে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ডিএসইতে ১৯৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বেড়েছে। দাম কমেছে ১১৫টির এবং ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের সপ্তাহেও শেয়ারবাজারে ছিল উত্থান। বাজারের সব সূচকে এমন উত্থানের কারণে বেড়েছে বাজার মূলধন। সর্বশেষ ডিএসইর মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ কোটি টাকার বেশি; যা চলতি মাসের শুরুতে ছিল ৩২ লাখ কোটি টাকা। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৭৫ পয়েন্ট।

বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৮১টির এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close