জীবন-যাপন

ঘুম ভালো না হলে কমে মস্তিষ্কের ক্ষমতা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ গভীর রাত পর্যন্ত ঘুম না আসা, কিছুক্ষণ পরপর ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, রাতে ঘুম হয় না কিন্তু সারাদিন ঘুমঘুম ভাব থাকে- ঘুমের এমন নানা সমস্যায় ভোগেন অনেকে। আসলে ঘুমেরও একটি ছন্দ আছে। এই ছন্দ ব্যাহত হলে শারীরিক, মানসিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম শুধু শরীর নয়, মনও ভালো রাখতে সহায়তা করে।

চিকিৎসকদের মতে, একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন যারা অনিদ্রায় ভোগেন তারা নানারকম শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হন। এমনকি তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও কমে যায়। বিচারবুদ্ধি ঠিক থাকে না।

পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গবেষণা কী বলছে, দেখে নেওয়া যাক-

ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সারাদিন প্রচুর কাজ করতে পারার সক্ষমতা তৈরি করে রাতের ঘুম। রাতে ভালো ঘুম হলে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে পরেরদিনের জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়। এছাড়া হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরী। গবেষণার ফলাফল বলছে, স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমালে প্রাকৃতিকভাবে শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যায়। ফলে রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে না।

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে ঘুমের বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত ঘুমালে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। যারা দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রায় ভুগছেন, একটা সময়ের পর তাদের বিচারবুদ্ধি কমে যায়। আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। কারণ সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা দিতে ব্যর্থ হয় মস্তিষ্ক। ফলে নিজের দক্ষতাগুলো হারিয়ে যেতে থাকে।

ভিন্ন একটি গবেষণার ফলাফল…

ইতালীর পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসক কয়েকটি ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব নিরূপন করেছেন। এজন্য তারা কয়েকটি ইঁদুরকে তিনটি দলে বিভক্ত করেন। একদল ইঁদুর ইচ্ছামতো ঘুমাতো। আর একদল ইঁদুরকে তারা বেশি ঘুমাতে দিত না। অপর ইঁদুরের দলকে একেবারেই ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। ৫ দিন পর দেখা গেল, না ঘুমানো ইঁদুরের দল অত্যন্ত নাজেহাল হয়ে পড়েছিল। এই তিন দলের ইঁদুরের দৌঁড়ানো বা চলাফেরার মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেল, বেশি ঘুমানো ইঁদুরের দলই সবচেয়ে ভালোভাবে দৌঁড়াতে পারছে।

ঘুমেই তাজা হয় মস্তিষ্ক

ঘুম হলো মস্তিষ্কের প্রাকৃতিক খাবার। পর্যাপ্ত ঘুম হলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। কাজে মনোযোগ ও উদ্দীপনা বাড়ে।

ঘুম ভালো হওয়ার উপায়

  • যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। ফলে ঘুম ভালো হয়।
  • শোবার ঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বিছানা আরামদায়ক হতে হবে।
  • বাসায় হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে। ব্যায়াম করলে ঘুম ভালো হয়।
  • ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩ ঘন্টা আগে থেকে ল্যাপটপ, ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না। ঘুমের সমস্যা থাকলে সন্ধ্যার পর টেলিভিশনও দেখা উচিত না। অর্থাৎ রাতে যেকোন স্ক্রিনের সঙ্গে সংযোগ না রাখাই ভালো।
  • প্রতিদিন একইসময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • চা, কফি যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
  • রাতজেগে কাজ করার চেয়ে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে খুব ভোরে উঠে কাজ করার অভ্যাস করা ভালো।

পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও বড় সমস্যা। তাই এই সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত না। এসকল নিয়ম মেনেও ভালো ঘুম না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাওয়া ঠিক না।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close