কৃষিদেশজুড়ে

ঘানি নিয়ে ঘুরে ঘুরে সরিষার তেল ভাঙিয়ে দিচ্ছেন ঢাবি শিক্ষার্থী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রাজধানীর আদাবর মনসুরাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার দুপুরে দেখা যায় একটি জটলা। জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমাণ ঘানিতে প্রস্তুত হচ্ছে সরিষার তেল। সেটি ঘিরে ক্রেতার পাশাপাশি উত্সুক জনতার ভিড়। আলাপকালে জানা যায়, খাঁটি সরিষার তেল বিক্রির জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ এই ঘানি নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। পথের ধারে, বাড়ির গেটে থেমে ক্রেতার চোখের সামনে তেল তৈরি করে বিক্রি করা হয়। সরিষার তেল বিক্রির এ আয়োজনে যুক্ত মুন্নাফ ও আইনুল মূলত কর্মচারী। প্রকৃত মালিক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সাদ্দাম হোসেন এ বছরের শুরুতে নিজ এলাকার দুজন কর্মী দিয়ে রাস্তায় নামান তেলের ঘানি। নাম দিয়েছেন হলিড্রিম সরিষার তেল। রিকশাভ্যানের সঙ্গে মোটরসহ যন্ত্রপাতি স্থাপন করে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ ঘানি। বেচাবিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

লালমাটিয়ার বাসিন্দা নাঈমা মাহবুব বলেন, ‘গলির মুখে দেখি সরিষা ভাঙিয়ে তেল বিক্রি হচ্ছে। প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। এখন অনেকটাই নিয়মিত ক্রেতা। দাম ও মান নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, তাঁর বাড়ি পাবনার চাটমোহরের নটাবাড়ী গ্রামে। অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা সাদ্দাম ছাত্রজীবনেই পা বাড়ান উপার্জনে। ২০১২-১৩ সালে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এ বছর মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর মাথায় এই পরিকল্পনা আসে ভারতের একজন ভ্রাম্যমাণ তেল বিক্রেতার ভিডিও দেখে।

সাদ্দাম বলেন, ‘প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকার তেল বিক্রি হয়। দুই কর্মীর বেতনসহ খরচ বাদে লাভ থাকে ভালোই।’

উদ্যোগ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরুতে যন্ত্রটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ টাকা। প্রায় দেড় লাখ টাকার সরিষা কিনে এই ব্যবসা শুরু করি। মাসিক চাহিদা অনুযায়ী সরিষা কিনে আনি মির্জাপুর হাট থেকে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, আজিমপুর, রায়েরবাজার এলাকাতেই বেশি অবস্থান করে সাদ্দামের তেলের মেশিন। এর বাইরে মতিঝিল, উত্তরা, গাজীপুরসহ কয়েকটি এলাকায় পৃথক মালিকানায় ভ্রাম্যমাণ তেলের ঘানি রয়েছে।

তবে পথে পথে তেল বিক্রির কাজে বিপত্তিও আছে। বিভিন্ন সড়কের ধারে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে ৫০-৬০ টাকা করে দিতে হয়। নইলে তারা সেখানে তেলের মেশিন চালাতে দেয় না। আবার মুদি দোকানদাররা গলি কিংবা বাজারের কাছে থামতে দেয় না। পুলিশের ‘লাইনম্যান’ পরিচয়েও টাকা আদায় করে অনেকে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close