বিশেষ প্রতিবেদন
গোলাপি রং পেন্সিল
ডা. ফারহানা মোবিনঃ ঢং ঢং ঢং। ঘন্টা পড়ে গেল আনন্দ বিদ্যালয়ের। সবাই দৌড়ে বেরিয়ে গেল শ্রেণীকক্ষ থেকে। শুধু মাত্র শিশির ছিল চেয়ারে বসে। তার দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল মেঝেতে পড়ে থাকা গোলাপি রং পেন্সিলটির দিকে।
শিশির ভালোভাবেই জানত যে, পেন্সিলটি বাদলের। কিন্তু শিশির কাউকে কিছু না বলে চুপ করে মেঝেতে পড়ে থাকা রং পেন্সিলটি নিয়ে নিল। কেউ দেখতে পেলো না।
গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে সবাই চলে গেল বাড়ি। এই গোলাপি রং পেন্সিলটা দীর্ঘদিন থেকে শিশিরের খুব পছন্দ হয়েছিল। শিশিরের বাসার জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল কাঠঠোকরা পাখি। শিশির খুব সুন্দর করে এঁকে ফেলল সেই পাখির ছবি। বাবা পাখির ছবিটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। রং পেন্সিল দেখে বাবা বলল, তুমি এতো সুন্দর পেন্সিল কোথায় পেয়েছো? শিশির সব ঘটনা খুলে বলল।
বাবা বললো, শিশির এভাবে আর কোন জিনিস কাউকে না বলে নিবে না। এটা উচিৎ না। তুমি ভালো করেই জানো যে, এই রং পেন্সিলটা বাদলের। হয়তো কোন কারণে তার কাছে থেকে মেঝেতে পড়ে গেছে, রং পেন্সিলটা নষ্ট হলে বুঝতাম যে, ওটা নষ্ট, তাই বাদল ফেলে দিয়েছে। কিন্তু রং পেন্সিলটা ভালো, তোমার উচিৎ ছিল বাদলের পেন্সিলটা তাকে দিয়ে দেয়া। অথচ তুমি তাকে না জানিয়ে এটা নিয়েছো। এভাবে নেয়াটা অপরাধ।
বাবার কথাটাই ঠিক। শিশির তার ভুল বুঝতে পারলো। পরের দিন বাদলকে তার রং পেন্সিলটা ফিরিয়ে দিল। রং পেন্সিল ফিরে পেয়ে বাদল খুবই খুশি হলো।
শিশিরকে বাদল একটি চকলেট উপহার দিল। কিন্তু রং পেন্সিলের জন্য শিশিরের মনটা খারাপ হয়ে গেল।
স্কুল ছুটি হয়ে গেল। সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে বাড়ি চলে গেল শিশির। বাবা তার হাতে উপহার দিলেন পুরো এক বাক্স রং পেন্সিল।
শিশির খুব খুশি হলো। এবার সে এঁকে ফেলল বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। আর সে পতাকার নিচে আনন্দ বিদ্যালয়। ছবিটি দেখে বাবা মুগ্ধ হয়ে গেল। শিশিরকে জড়িয়ে ধরলেন বুকের সাথে শিশির বলল, বাবা আমি আর কোনদিন কাউকে না বলে লুকিয়ে কিছু নিবো না। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকবো। বাবা বলল, একদিন তুমি অনেক বড় চিত্রশিল্পী হবে।
কথাটা শুনে আনন্দে ভরে উঠল শিশিরের মন।
লেখকঃ ডাঃ ফারহানা মোবিন
জেনারেল ফিজিশিয়ান ও লেখক
#এমএস