বিশ্বজুড়ে

গাছে চড়ে অনলাইন ক্লাস করেন এই দুই বোন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ এই মহামারিকালে অনলাইন ক্লাসেই ভরসা শিক্ষার্থীদের। তবে সবারই তো আর সামর্থ্য নেই অনলাইনে ক্লাস করার। আবার কিছু অঞ্চল রয়েছে যেসব স্থান ফোনের সিগন্যাল ও ডাটা কানেকশন হওয়াটাও দুরুহ বিষয়।

তেমনই এক সমস্যায় পড়েছেন দুই বোন। পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের বসবাস। ঘরে তো ফোনের সিগন্যাল পাওয়া যায় না। এ কারণে তারা দূরের এক বিশাল গাছে চড়ে অনলাইনে ক্লাস করছেন।

বলছি, ব্রাজিলের সালভাদরের দুই তরুণী বোনের কথা! তারা প্রতিদিন একটা পাহাড়ের চূড়ায় ওঠেন, তারপর সেখানে থাকা এক জলপাই গাছে চড়ে বসেন মোবাইলের সিগন্যাল পাওয়ার জন্য। এভাবেই অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ নিতে হচ্ছে তাদের।

মহামারির কারণে দেশটিতে মার্চ মাসে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে শুধু এই দুই বোনকে নয়, প্রান্তিক অঞ্চলের হাজারো মানুষকে এ রকম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এল সালভাদরের গুয়াতেমালা সীমান্তবর্তী এল তাইগ্রে অঞ্চলে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পাওয়া খুব দুরূহ। তাই মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করতে বেশ ভুগছেন ওই তল্লাটের শিক্ষার্থীরা।

দুই বোনের একজন ২২ বছর বয়সী গণিতের ছাত্রী মাতিলদে। তিনি বলেন, আমরা যারা প্রান্তিক অঞ্চলে থাকি, আমাদের জন্য পড়াশোনা করা সবচেয়ে কষ্টের কাজ। এখানে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

তিনি আর তার ১৯ বছর বয়সী বোন, পরিসংখ্যানের ছাত্রী মারলেনে একসঙ্গে এভাবে তাই গাছে চড়ে ক্লাস করেন। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে এই সপ্তম ও অষ্টমজন তাদের পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রীয় ইউনিভার্সিটি অব এল সালভেদর থেকে স্নাতক পাস করার স্বপ্ন নিয়ে এভাবেই লড়ে যাচ্ছেন।

এল তাইগ্রে পাহাড়ে টহলের সময় মাতিলদেকে এভাবে ক্লাস করতে দেখেন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা কাস্ত্রো রুইজ। তারপরই এই দুই বোনের এমন মর্মস্পর্শী গল্প সবার সামনে আসে।

রুইজ বলেন, একদিন চলতি পথে পাহাড় চূড়ার জলপাই গাছে বসা এক তরুণীকে দেখে প্রথমেই ভাবনা এলো, নিশ্চয়ই ওর কিছু একটা হয়েছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই যা জবাব পেলেন, আমি শুধু পড়ালেখাটা চালিয়ে যেত চাই। বিস্ময় ও বিমুগ্ধ ওই পুলিশ কর্মকর্তা একটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়।

পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য এই বর্ষা মৌসুমে ওই দুই বোনকে সাপের ছোবল এড়িয়ে, প্রায় এক কিলোমিটার পিচ্ছিল পথ হেঁটে আসতে হয়। তারা সঙ্গে একটি ফোল্ডেবল টেবিল ও চেয়ার নিয়ে আসেন।

আর বৃষ্টির সময় মাথায় ধরে রাখেন ছাতা। সেইসঙ্গে গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা বিষাক্ত পোকামকড় তো রয়েছেই। সব কিছু উপেক্ষা করেই এই দুই বোন লেখাপড়ার জন্য এমন ঝুঁকিওে মেনে নিয়েছেন।

পড়াশোনার বাইরে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই বোনেরা রুটি বিক্রি করে তাদের বাবাকে সাহায্য করেন। তার বাবা পেশায় কৃষক। এদিকে দেশটির রাজধানী সান সালভাদর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমের এলাকা- ওজো দে আগুয়ার অধিবাসী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এরিক পালাসিয়াসকেও মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ পেতে পাথরে আকীর্ণ এক পর্বতের চূড়ায় উঠতে হয়।

বেসরকারি হোসে মাতিয়াস দেলগাদো বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিউনিকেশনস বিভাগে পড়ুয়া ২০ বছর বয়সী পালাসিয়াস। তিনটা ইটের ওপর বসে, মাথার ওপর ছাতা মেলে ধরে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে হয় তাকে। তাতেও স্বস্তি নেই। কারণ মশার মারাত্মক উৎপাত।

তিনি ঠিক করেছেন ওই অঞ্চলের অন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদনপত্র পাঠাবেন, যেন ওখানে ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। এল সালভাদরকে লম্বালম্বিভাবে প্রায় দুই ভাগ করে দিয়েছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি। আর এ কারণে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পেতে বিঘ্ন ঘটে।

ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটাসের তথ্যমতে, দেশটির ৬৬ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ৬০ শতাংশ। এদিকে বুধবার ইউনিসেফ প্রকাশিত এক তথ্যসূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে সারা পৃথিবীতে ৪৬ কোটি ৩০ লাখ শিশু অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে অক্ষম। সূত্র: এএফপি

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close