দেশজুড়েব্যাংক-বীমাশিল্প-বানিজ্য
গভর্নরের সঙ্গে দেখা করবেন আমানতকারীরা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ টাকা ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে শিগগিরই দেখা করবেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের আমানতকারীরা। এতে কাজ না হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে দেখা করবেন। তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাইবেন।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড আমানতকারী সমিতি’ আয়োজিত এ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগী আমানতকারীরা এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি আকারে সমিতিটি আত্মপ্রকাশ করে। আহ্বায়ক হিসেবে আছেন মো. আনোয়ারুল হক। যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল আহমেদ ও রানা ঘোষ। সম্পাদক প্রশান্ত কুমার দাস, কোষাধ্যক্ষ সারতাজ ভূঁইয়া। এ ছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন- জহিরুল আলম, আবদুল্লাহ আল আমিন, ইদ্রিস গ্রুপ ক্যাপ্টেন, রাফী ইকবাল, সামিয়া বিনতে মাহবুব, আবদুল গাফফার আহমেদ ও জহিরুল ইসলাম। এটি ছিল এই সমিতির দ্বিতীয় বৈঠক। এতে প্রায় অর্ধশত ভুক্তভোগী আমানতকারী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন আমানতকারীরা। অন্যথায় আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুশিয়ারি দেন তারা।
সামিয়া বিনতে মাহবুব নামের একজন আমানতকারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলেই আমরা এ প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখেছি। এমনকি আমানতের বিপরীতে উপযুক্ত ট্যাক্স দিয়েও আসছি। তাহলে আমাদের আমানতের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব কার- এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, টাকার জন্য আমরা পিপলস লিজিংয়ে গেলে তারা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যান। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলে তারা হাইকোর্টে যেতে বলছেন। এ যেন আমাদের সঙ্গে ফুটবলের মতো আচরণ। আমরা তো আর ফুটবল নই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে এমন অনেক আমানতকারী আছেন যারা এই টাকার লভ্যাংশ দিয়ে সংসার চালান। অনেকের চিকিৎসা নির্ভর করছে এই টাকার ওপর। আমি নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসায়ন সিদ্ধান্তে সবকিছুই থমকে গেছে। এখন কোথায় গেলে আমাদের টাকা ফেরত পাব?
আরেক আমানতকারী বলেন, পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান এমডি সামি হুদা ও পরিচালকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ আমাদের টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা তাদের পাসপোর্ট জব্দ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চাই।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে মার্কেনটাইল ব্যাংকসহ সাধারণ আমানতকারীদের পক্ষ থেকে মোট ৭টি মামলা করা হয়েছে। টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি পিপলস লিজিংয়ের অপকর্মের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন অনেকে।
গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করলে ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেয়া হয়।
পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক অবস্থা : পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান আমানত ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানত। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে পিপলস লিজিং লভ্যাংশ দিতে পারছে না। তবে আমানতের বিপরীতে কাগজকলমে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হলেও বাস্তবে তিন ভাগের এক ভাগও নেই বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।