বিশ্বজুড়ে
গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা: বিচারের দাবিতে উত্তাল ভারত
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দারাবাদ শহরে ২৭ বছর বয়সী এক প্রাণিচিকিৎসক নারীকে গণধর্ষণ ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। ‘এরপর কি আমি?’ এমন স্লোগানে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন সব শ্রেণি পেশার মানুষ। বলা হচ্ছে, ভারতের একটি চলন্ত বাসে নির্ভয়া নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় দানাবাঁধা আন্দোলনের পর এটি আরেকটি বড় বিক্ষোভ।
রোববার(০১ নভেম্বর) হায়দারাবাদের একটি থানার সামনে হাজারো মানুষ বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে। নিহত ওই তরুণী যেই কলোনিতে থাকতেন; এ ঘটনার পর রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, পুলিশ কাউকেই প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না সেখানকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। কলোনির মূল ফটক তালাবদ্ধ করে রাখেন তারা। এখানকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরব ভূমিকা নিয়েও। এই কলোনির এক বাসিন্দা গণমাধ্যমে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও টুইট করলেন না কেন?’
এ বিষয়ে দেশটির রাজ্যসরকার প্রথমদিকে চুপ থাকলেও মুখ খুলেছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। তিনি ঘটনাটিকে ‘ভয়ঙ্কর’ উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে মামলাটির সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারকে অসহযোগিতা করা অভিযোগ উঠেছে। নিহতের বোন বলেছেন, অভিযোগ জানাতে গেলে তাকে এক থানা থেকে আরেক থানায় পাঠিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এই অভিযোগ গত শনিবার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি। তিনি বলেন, ‘পুলিশ দায়িত্বে অবহেলা করেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় প্রত্যেকটি থানার কর্মকর্তারা যাতে করে অভিযোগ নেয় তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশের উচিৎ ছিল মামলা দায়ের করার আগেই ওই তরুণীর পরিবারকে সাহায্য করা।’
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই নারী চিকিৎসকের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তাকে হত্যার আগে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। এই ঘটনায় ট্রাকচালক ও খালাসিসহ সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সম্পৃক্ততায় স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
এদিকে ধর্ষক ছেলেদের নিয়ে ক্ষুব্ধ তাদের পরিবারও। এক অভিযুক্তর মা-তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ‘দোষী হলে তাকেও পুড়িয়ে মারা উচিত।’ এর আগে ভুক্তভোগী ওই নারীর মা-ও ধর্ষকদের জনসম্মুখে পুড়িয়ে মারার দাবি করেন। আরেক অভিযুক্তের স্বজনরা গণমাধ্যমে বলেছেন, ঘট্নার পর থেকে তারা কাউকে মুখ দেখাতে পারছেন না।
গত বুধবার রাতে ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই চিকিৎসক গণধর্ষণের শিকার হন। পরে হায়দারাবাদের শামসাবাদের টোল প্লাজার সামনে তার দেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনার পরে বোতলে পেট্রোল বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তেলেঙ্গানা সরকার। তারপরও স্থানীয় ওই পাম্পের কর্মীরা কীভাবে অভিযুক্তদের কাছে বোতলে পেট্রোল বিক্রি করলেন তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
দেশটির সর্বশেষ সরকারি অপরাধের পরিসংখ্যান অনুসারে, পুলিশ ২০১৭ সালে ভারতে ধর্ষণের ৩৩ হাজার ৬৫৮টি মামলা দায়ের করেছে। প্রতিদিন গড়ে যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯২টি।
/আরএম