শিক্ষা-সাহিত্য
খুবিতে চলছে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ধর্মঘট!
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: বেতন-ফি কমানো, আবাসন সংকট নিরসন, পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতি চালু, মুক্তচিন্তা বিকাশে সহায়ক অধ্যাদেশের ব্যবস্থা করার দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুরু হওয়া কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র জানায়, বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে দুপুর থেকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। বিকালে শিক্ষার্থীদের অধিকার হরনের প্রতিবাদস্বরূপ চোখে কালো কাপড় বেঁধে ‘পরিণতি’ নামে একটি পথনাটক করে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ সকল দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আবারও অবস্থান নিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বেতন ফি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারা নতুন টার্মে রেজিস্ট্রেশনের পূর্বেই বেতন ফি সহনীয় মাত্রায় আনার দাবি জানান। অন্যথায় রেজিস্ট্র্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৯০ এর ৫ম খণ্ড দাগ নাম্বার ৪৫, পৃষ্ঠা ৬৬১৫ এ উল্লেখ আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্র সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্বারা নির্ধারিত স্থান ও শর্তাধীনে বসবাস করবে। অথচ মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৩১.৫৯ শতাংশ আবাসন সুযোগ পায়। আবাসন সংকট নিরসনে কত দিনের মধ্যে নতুন হল হবে তা লিখিত আকারে জানানোর পাশাপাশি নতুন হল নির্মাণের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হোস্টেল ব্যবস্থার দাবি জানান।
পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন এবং প্রয়োজন অনুসারে তৃতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতি চালু করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিনোদন ব্যবস্থা আয়োজন ও ম্যাগাজিন, বুলেটিন, পোস্টার প্রকাশনায় শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
লাইব্রেরি সময়সীমা সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা করে সপ্তাহে ৭ দিনই খোলা রাখার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক রাখার পাশাপাশি মেডিকেলে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম কেনার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ই নভেম্বর এসব সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর ২১শে নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় তারা গতকাল এ কর্মসূচির ডাক দেয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অসামাঞ্জস্য পাওয়া গেলে অবশ্যই টাকা ফেরত দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সেসব সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি জানান, সর্বশেষ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবিসহ সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহবায়ক কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. শেখ মো. রজিকুল ইসলাম এবং সদস্য-সচিব ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন। কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে কমিটির সদস্যরা তদন্তের বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চাইতে গেলে তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
/এনএ