দেশজুড়ে
খালেদা জিয়া কি তারেক জিয়ার কাছে কোনঠাসা ?
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কয়েকদিন ধরে খোদ বিএনপির মধ্যেই সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়, খালেদা জিয়া কি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন? কারণ তিনি এখন বিদেশ যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। খালেদা জিয়ার আত্নীয়রাও উদগ্রীব কখন তাকে বিদেশ পাঠানো যায়। দলের নেতারা প্রথম প্রথম বিদেশ যাওয়ার কথা না বললেও এখন তারাও সুর মেলাতে বাধ্য হচ্ছেন বিদেশে চিকিৎসা নিতে হবে খালেদা জিয়ার। এই প্রেক্ষিতে দলের তৃণমূলের নেতাদের প্রশ্ন বয়স ও অসুস্থতার বিবেচনায় খালেদা জিয়া কি আর রাজনৈতিক ধকল সইতে পারছেন না?
কারণ শর্ত সাপেক্ষে গত ২৫ মার্চ মুক্তি পাওয়ার খালেদা জিয়া একদম নিশ্চুপ। রাজনৈতিক বিষয়ে কথাবার্তা তো নেইই, তেমন কারো সঙ্গে দেখা সাক্ষাতও করছেন না। এ অবস্থায় তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে।
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার ভিন্ন প্ল্যানের কথা বলছেন। তাদের মতে, দলের বর্তমান কমান্ডিং প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে সেটাই বহাল থাকবে। বর্তমান চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া আমৃত্যু একই পদে থাকবেন। তবে কমান্ডিং ক্ষমতা পুরোটাই থাকবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার হাতে। তার নেতৃত্ব পর্যায়ক্রমে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হবে। তারেক জিয়া খালেদা জিয়াকে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত তাতে সায় দেয়নি।
বিএনপির একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যানের মন্তব্য, ‘আপাতত যেভাবে দল পরিচালিত হচ্ছে, সেটাই থাকবে বলে দৃশ্যমান। ম্যাডাম এখন পেছন থেকে দলকে পরামর্শ দেবেন। নিজের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে তার ছেলে তারেক জিয়ার হাতেই থাকবে দল পরিচালনার ভার। তবে ভবিষ্যতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদটিকে আরও সুসমন্বয় করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এ ধরনের কোনও পদ সৃষ্টি হতে পারে।’
বিএনপির অনেক নেতা বলছেন, তাতেই সমাধান। কারণ তারেক জিয়া সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। অন্যদিকে বিএনপির একটি মহল চাচ্ছে খালেদা জিয়ার হাতেই ক্ষমতা থাকুক। এই দুই পক্ষের সংঘাতে বিএনপি অনেকটা বিভক্ত বহুদিন ধরে। তাতে অনেক সিনিয়র নেতা বিএনপি ছাড়ার প্লানও করছেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়া জেলে থাকা অবস্থায় তারেক জিয়ার নির্দেশে তারেকপন্থীরা তাদের কোনঠাসা করে রেখেছিল। তাই এখন সমাধান হিসেবে বিএনপির নেতৃবৃন্দও এই পথ বেছে নিতে প্রস্তাব দেবেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার আগের দিন রাতে তারেক জিয়াকে সহযোগিতা করতে গুলশানের অফিসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনুরোধ করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দুই বছর পর এখন অবস্থা বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া এই অবস্থায় বিদেশে যাবেন সেটাও ভাবতে পারছেন না, কারণ তারেক চাচ্ছেন তিনি বিদেশ যাওয়ার আগে দেশে থেকেই বিএনপির সকল দায়িত্ব তার হাতে ন্যস্ত করুক। একটা মিটিং ডেকে বিএনপির দায় দায়িত্ব তারেকের কাছে দিবে এমনটাই চাওয়া তারেকের। সেক্ষেত্রে কেউ যেন প্রশ্ন না তুলতে পারে যে বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন তারেক।
দলের আরেকটি সূত্রের তথ্যমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার মনোমালিন্য চূড়ান্ত রুপ নেয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে সব ঠিক থাকলেও জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার আসনকেন্দ্রিক চাহিদা ও নির্বাচনি প্রচারণায় ফ্রন্টনেতাদের অনাগ্রহের বিষয়টি বিচলিত করেছে খালেদা জিয়াকে। তখন নির্বাচনকে ঘিরে তারেক জিয়ার ব্যাপক বাণিজ্য প্রকাশ পেয়েছে। খালেদা জিয়ার কাছে সেসব প্রমাণও আছে। তবে খালেদা জিয়া এখন এমনভাবে কোনঠাসা হয়ে আছেন যে কোন কিছুই তিনি বলতে পারছেন না।-বাংলা ইনসাইডার