কৃষিপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনশিল্প-বানিজ্য
কোন এনজিও’র কাছে থেকে আর্থিক সাহায্য নেয়না ঝিনাইদহের রায়জাদাপুরবাসী
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের এমন একটি গ্রাম আছে যে গ্রামে নেই কোন এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম। নিজেদের চেষ্টায় তারা নিজেরাই এখন স্বাবলম্বী। ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ঐ গ্রামের নাম রায়জাদাপুর।
শৈলকূপার ১২ নং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের হাট ফাজিলপুর বাজার থেকে পিচ ঢালা পথ ধরে এগোতেই অল্প দূরত্বেই রায়জাদাপুর গ্রামের অবস্থান। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও ছোট্ট এই গ্রামটি পায়নি তেমন আধুনিকতার ছোয়া।
গ্রামবাসী সকলের মূল পেশা কৃষি হলেও কৃষিখাতেও পিছিয়েই ছিল তারা। কারণ কৃষিকাজের অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করার সামর্থ্যও যে ছিলনা তাদের। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘুরে দাড়িয়েছে রায়জাদাপুর। তারা এখন চাষ করেই এমন স্বাবলম্বী যে তাদের গ্রামে নেই কোন ক্ষুদ্র ঋণদানকারী এনজিওর লোলুপ ছায়া। নিজেরা এখন নিজেদের টাকাতেই স্বচ্ছলতার পথ খুজে পেয়েছে।
তাদের এই উন্নয়নের পথ দেখিয়ে গেছে “উন্নয়ন ধারা” নামে একটি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। তাদের দেখানো পথেই এই গ্রামের কৃষকরা একতাবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলেছে “স্বাধীন কৃষক সংগঠন”। এই সংগঠনের মাধ্যমেই তারা এখন স্বাবলম্বী। বাইরের অমুক তমুক এনজিও আর এই গ্রামে প্রবেশ করেনা। সংগঠনের সবাই মিলে মাসিক চাঁদা ও সঞ্চয় নির্ধারণ করে জমা করে নিজেরাই।
রায়জাদাপুরে প্রথমে যখন মাত্র ১৭ হাজার টাকা জমা হয় তখন তারা তিনজন চাষীকে ৫ হাজার করে ১৫ হাজার টাকা স্বনির্ভর ঋণ হিসেবে প্রদান করে পরীক্ষামূলকভাবে। এই টাকা চাষীরা মাসিক ৫০০ টাকা করে ১২ কিস্তিতে সংগঠনকে পরিশোধ করে।
এভাবেই তাদের শুরু। এভাবেই সফলতার মুখ দেখা শুরু করে রায়জাদাপুরবাসী। এরপর থেকেই তারা অন্যদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া বন্ধ করে দেয়। নিজেদের টাকা নিজেদের কাছেই থাকছে এছাড়া লাভও নিজেদের থাকছে।
রায়জাদাপুরের চাষী কামনা রানী বলেন, আমরা এখন নিজেদের টাকায় চলতে পারি। তাছাড়া ভালোভাবে চাষ করাও শিখে গিয়েছি। আগে অনেক ভূলভাল পদ্ধতিতে চাষ করতাম। এখন ফসল ও হয় ভালো, দামও পাই বেশি। তাই আগের চেয়ে অনেক ভালোই আছি।
মনি কুমার মৌলিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, নিত্যানন্দপুর ইউনিয়ন রায়জাদাপুর গ্রামের কৃষকরা নিজেরা উন্নয়ন ধারার দেখানো পথ ধরে নিজেদের পণ্য বেশি দামে সরাসরি ঢাকায় পাঠাচ্ছে। এতে করে তারা দাম ভালো পাচ্ছে। তাদের এখন আর অন্য কারো কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেয়ার প্রয়োজন পরছেনা। এই কারণে বিভিন্ন এনজিও যারা আশেপাশের সকল গ্রামেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে কিন্তু রায়জাদাপুরে তারা সুবিধা করতে না পেরে এই গ্রামে প্রবেশ করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমি আশেপাশের সকলের কাছেই বলি রায়জাদাপুরকে অনুকরণ করতে। তাদের কাছ থেকে শিখতে কিভাবে নিজেদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
উন্নয়ন ধারার আবাইপুর-নিত্যানন্দপুর অঞ্চলের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে রায়জাদাপুরের স্বাকৃস এর সদস্য ৫০ পরিবার। স্বনির্ভর ঋণ হিসেবে মাঠে আছে প্রায় ৫ লাখ টাকারও বেশি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে এই কার্যক্রম শুরু হয়। শৈলকুপা উপজেলার একটি অবহেলিত গ্রাম হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে রায়জাদাপুর। এই গ্রামে ঢুকতেই পথের দুপাশের মাঠভরা বাহারী ধরণের মৌসুমী শাক সবজি আর ফসল আপনাকে ছোট বেলার আদর্শ গ্রাম রচনার মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
/আরএম