খেলাধুলা

কিংবদন্তি মেসির দশম ফাইনাল কাল

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: ‘এমন একটা দল সাপোর্ট করি, কয়দিন পর পরই ফাইনাল খেলা লাগে’ সোশ্যাল মিডিয়ায় আর্জেন্টাইন সমর্থকের এই পোস্টটি নজড় কেড়েছে সকলের। তবে ভক্তদের এমন কথার যে যথেষ্ঠ যুক্তি আছে, তা প্রমাণ করে আর্জেন্টিনা দলের গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান। গত ১০ বছরে ৬ বার ফাইনাল খেলেছে আলবিসেলেস্তেরা। এবার আরও একটি ফাইনালের দারপ্রান্তে টিম আর্জেন্টিনা। আর দলটির সবচেয়ে বড় তারকা সুপারস্টার লিওনেল মেসি আছেন দশম ফাইনাল খেলার অপেক্ষায়। চলমান কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসরের ফাইনালে আগামীকাল (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় হার্ড রক স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে স্ক্যালোনি শিষ্যরা।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান আর্জেন্টাইন ফুটবলের এই ম্যাজিশিয়ান। প্রায় ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মেসি জিতে নিয়েছেন ফুটবল ইতিহাসের সম্ভাব্য সকল ট্রফি। সেই সঙ্গে আলবিসেলেস্তেদের হয়ে খেলেছেন ৯টি ফাইনাল। সেখানেও মেসির নামের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে সফল শব্দটি। কেননা ৯বার ফাইনাল খেলে ৫টিতেই শিরোপা হাতে তুলেছেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। মেসি তার অভিষেকের বছর নিজের প্রথম টুর্নামেন্টেই পেয়ে যান শিরোপার স্বাদ। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তার জোড়া গোলেই শিরোপা নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। সেই আসরে মেসির পা থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬ গোল। যার ফলে টুর্নামেন্ট সেরার খেতাবও পেয়েছিলেন মেসি।

আগেরটি বয়স ভিত্তিক দলের হয়ে খেললেও আর্জেন্টিনার মূল দলের জার্সি গায়ে ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলেন মেসি। এই আসরেই প্রথমবার ফাইনাল হারের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। অলিম্পিক ফুটবলে মেসির অভিষেক ২০০৮ সালে। যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চিনের বেইজিংয়ে। বেইজিং অলিম্পিকে নিজের তৃতীয় ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মেসির অ্যাসিস্টে পা ছুইয়ে দলকে স্বর্ণপদক এনে দেন ডি মারিয়া।

মেসির চতুর্থ ফাইনাল আলবিসেলেস্তে ভক্তদের পীড়া দিয়েছে বহুকাল। ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে ট্রফির খুব কাছে গিয়েও তা ছুঁতে না পারার বেদনায় নীল হতে হয় মেসিদের। সেই ফাইনালে ব্রাজিল ফুটবলের স্বর্গ মারাকানায় অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটে জার্মানির কাছে গোল হজম করে বিশ্বকাপ স্বপ্ন অধরা থেকে যায় দলটির। যদিও সেবার টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার গোল্ডেন বল জিতে তুষ্ট থাকতে হয় ফুটবলের এই মহাতারকাকে।

আর্জেন্টাইন ভক্তদের হৃদয় ভাঙার গল্প এখানেই শেষ নয়। ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকায় নিজের পঞ্চম ফাইনালে চিলির কাছে পরাজিত হয় তার দল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকাতেও নিজের ষষ্ঠ ফাইনালে পেনাল্টি মিসের সুবাদে টানা দ্বীতিয়বার চিলির কাছে হেরে শিরোপা খোয়াতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। আর সেদিনই টানা তিন ফাইনাল হারের শোকে মেসির কান্নাভেজা কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা স্তব্দ করে দেয় গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। ফলস্রুতিতে শুরু হয় নিন্দুকদের খোটা এই বলে যে, আর্জেন্টিনার হয়ে মেজর কোনো শিরোপা জিততে পারেননি মেসি।

নিন্দুকদের তোপের মুখে পড়ে অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন এই তারকা। একটি মাত্র ট্রফির জন্য আর্তনাদ করা মেসি অবসর ভেঙে আবারও আকাশি নীল জার্সিতে ফেরেন ২০২১ সালের কোপা আমেরিকায়। হ্যাটট্রিক মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারা মেসিরা এবার পাড়ি জমায় শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে। সে ম্যাচে ডি মারিয়ার নৈপুণ্যে স্বাগতিক ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেশের হয়ে পরম আরাধ্যের এবং নিজের প্রথম শিরোপা জয়ের উল্লাসে ফেটে পড়েন মেসি। যার কল্যাণে দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবারও লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের পুনরাবৃত্তি করে আলবিসেলেস্তেরা।

এরপর কোপা ও ইউরোর চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে ২০২২ সালে আয়োজন করা হয় লা-ফিনালিসিমা। এবার নিজের অষ্টম ফাইনালে ইউরো জায়ান্ট ইতালিকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে চ্যাম্পিয়ন হয় মেসির আর্জেন্টিনা।

এরপর মেসির নবম ফাইনাল আর আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের ইতিহাসের স্বাক্ষী তো পুরো পৃথিবী। যেখানে সকল তর্ক বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে সর্বকালের সেরা বনে যান লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। সেই সঙ্গে ফুটবলও পেয়ে যায় তার পূর্ণতা। ২০২২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে অঘটনের শিকারের পর মিক্সড জোনে মেসি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভক্তদের হতাশ করবো না। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন।’ পরবর্তীতে নেতার যেই কথা সেই কাজ। অধিনায়কের দুরন্ত পারফরম্যান্সে ছোট্ট সেই কাঁধে করে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। ঘটনাবহুল ফাইনাল ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়ালে বাজপাখি খ্যাত এমি মার্টিনেজের অতিমানবীয় দক্ষতায় শিরোপা ওঠে মেসির হাতে। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার পর দীর্ঘ ৩৬ বছর পরে আর্জেন্টিনার হয়ে লুসাইলে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেন মেসি। সেই সঙ্গে ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে দুই বার আসর সেরার ট্রফিও জেতেন তিনি। পরবর্তীতে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।

চলতি কোপার আসরে আগামীকাল নিজের দশম ফাইনালে মাঠে নামবেন মেসি। সে ম্যাচেও ইতিহাস ছোঁয়ার অপেক্ষায় তার দল আর্জেন্টিনা। কাল ফাইনালে মেসিরা শেষ হাসি হাসলেই ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা তিনটি মেজর ট্রফি জয়ের অনন্য রেকর্ডে স্পেনের সাথে ভাগ বসাবে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা শেষ তিন বিশ্বকাপে দুইবার ফাইনাল এবং সর্বশেষ কোপার পাঁচ আসরে চার বার ফাইনাল খেলেছে মেসির অধিনায়কত্বে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close