প্রধান শিরোনামসাভারস্থানীয় সংবাদ
কল কারখানার সাভারে সূ্র্যমুখীর হাসি
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ শহরজুড়ে ইট পাথরের দালান কোঠা। পাল্লা দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিল্প কারখানা। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। সে শহরে এবার আলো ছড়াচ্ছে সূর্যমূখীর হাসি। উদ্যমী কৃষকের হাত ধরে প্রথমবারের মত শিল্পাঞ্চল সাভারের পৌর এলাকায় এখন হলুদ হাসি হাসছে অজস্র সূর্যমূখী।
সৌন্দর্যের সাথে আয়। এমন ভালোলাগার সম্ভাবনার গল্প তৈরি করেছেন সাভারের শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি তিনি সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় কয়েক বিঘা জমিতে সূর্যমূখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। তার এমন উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে শহরজুড়ে।
শফিকুলের স্বপ্নেবোনা বাগানে ঘুরে দেখা যায়, সূর্যের দিকে তাকিয়ে হলুদ ফুলের হাসি। মৃদু বাতাসের সাথে ফুলের সখ্যতা, মন কাড়বে অজান্তেই। হারিয়ে যাওয়ার কোন গল্প যেন লুকিয়ে আছে এর মাঝে। এই সখ্যতার মেলবন্ধনের রূপকার মধ্যবয়সী শফিকুল। চেহারায় বয়সের ছাপ থাকলেও, কাজে ক্লান্তহীন। পরিচর্যায় পার করছেন ব্যস্ত সময়।
করোনা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে সাভারের ১০০ জন কৃষককে ১ কেজি করে মোট ১০০ কেজি হাইব্রিড সূর্যমূখী বীজ প্রণোদনা হিসেবে বিনামুল্যে প্রদান করে সাভার উপজেলা কৃষি অফিস।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, এ বছর সাভারে প্রথমবারের মত সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। আশা করছি ভাল ফলন হবে এবং আগামীতে ব্যাপক হারে সূর্যমুখীর চাষ করবে কৃষকরা- যোগ করেন তিনি।
অনেক কৃষক প্রণোদনা পেয়েও প্রথমবারের মত চাষ করবে কিনা বুঝে উঠতে পারেনি। যে কারণে সাভারে এবার সূর্যমূখী চাষীর সংখ্যা অল্প। বর্তমান চাষীদের সাফল্য দেখে বাকিরাও এ চাষে আগ্রহী বলে মনে করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
প্রথমবারের মত ফলন হওয়াতে কৃষকদের এবারের চিন্তার কারণ ফসল বিক্রির স্থান নিয়ে। সেই চিন্তার রেখা মুছে দিতেও সচেষ্ট রয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। উৎপাদিত সূর্যমূখী বীজ নিজেরাই কিনে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তারা।
সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যসম্মত, অ্যান্টি অক্সিজেনযুক্ত এবং কোলেস্টোরেল মুক্ত। তাই এর চাহিদা দিনদিন বাড়ছেই। সাভারের বনগাও, বলিয়ারপুর, ব্যাংকটাউন এলাকায় প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী চাষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে সাভারের সংসদ সদস্য ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, সূর্যমুখী সাভার উপজেলার কৃষকদের জন্য সুখবর বয়ে আনতে যাচ্ছে। তারা সফল ভাবে সূর্যমূখী ফুল উৎপাদন করতে পেরেছে। খুব অল্প টাকায় বেশি মুনাফা সম্ভব এই চাষে। তিনি আরও বলেন সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ সুবিধা থাকলে সকল সহায়তা এই কৃষকদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে সূর্যমুখী চাষে বিঘা প্রতি খরচ ১০-১৫ হাজার টাকা, এক বিঘা জমিতে বীজ হবে ১০-১১ মণ, ১ মণ বীজে তেল হবে ১১-১২ লিটার, প্রতি লিটার তেল বিক্রি হবে প্রায় ২০০টাকা দরে।
সাভারের গোলাপগ্রামের কথা সারাদেশেই বিপুল আলোচিত। সারাবছর ফুল প্রেমীরা ছুটে যান সাভারের গোলাপগ্রামে। সেই ফুলপ্রেমীরা এখন নতুন সৌন্দর্য আস্বাদন করতে ছুটে যাচ্ছেন সূর্যমূখীর হাসি দেখতে। কম খরচে সূর্যমূখী চাষে ভালো লাভের আশায় সাভারের আরো কৃষকও এ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ।
/আরএম