প্রধান শিরোনাম

কর্মঘণ্টা কমিয়ে বদলে গেল অফিস সূচি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: জ্বালানি সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দিয়েছে সরকার। আগামীকাল থেকে দেশের সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস চলবে সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এছাড়া ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে সকাল ১০টার পরিবর্তে ৯টায়; বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে লেনদেন আর ব্যাংকের কর্মীরা কাজ করবেন বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

এতদিন সরকারি কর্মীরা অফিস করতেন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। ব্যাংকের কর্মীদের জন্য কাজের সময় নির্ধারিত ছিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কর্মঘণ্টা এগিয়ে নেয়ার এবং কিছুটা কমানোর বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার দুটো সুবিধা। একটা হলো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, দ্বিতীয়টি হলো যানজটের সময়টাও কিছুটা ভাগ হয়ে যাবে।

অফিসের সময়সূচি নিয়ে গতকালই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, আগামীকাল থেকে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। শুক্র ও শনিবার থাকবে সাপ্তাহিক ছুটি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জরুরি পরিষেবাগুলো নতুন অফিস সময়সূচির আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সময়সূচি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নির্ধারণ করবে। এতে আরো বলা হয়, ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক সময়সূচির বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর সময়সীমার বিষয়ে গতকাল জারি করা সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত পরিবর্তিত অফিস সময়সূচি অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আগামীকাল থেকে ব্যাংকে লেনদেনের সময়সূচি হবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করে বিকাল ৫টার মধ্যে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অফিস ত্যাগ করতে হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকায় (পোর্ট ও কাস্টমস এলাকা) অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপশাখা, বুথগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে ৫ আগস্ট ২০১৯-এ জারি করা ডিওএস সার্কুলার লেটার নং-২৪-এর নির্দেশনা বহাল থাকবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো।

অফিসের সূচি বদলের পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সপ্তাহে দুদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আগামী সপ্তাহ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রশাসন এবং সংস্থাপন শাখার উপসচিব সাইফুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করতেও বলা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরো কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি অফিসগুলোয় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কোথাও কোনো পর্দা টানানো থাকবে না। লাইট যথাসম্ভব কম লাগিয়ে কাজ করতে হবে। এয়ারকুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সম্প্রতি দেশজুড়ে লোডশেডিং ফিরে এসেছে। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়ের মতো হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সব বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় ভর্তুকির যে চাপ তৈরি হয়েছে, তাতে একমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে তারা মনে করছেন।

ওই বৈঠক থেকেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রাখা, আলোকসজ্জা না করা, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করা, বাজার, মসজিদ, শপিংমলে বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে আনা, যেকোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ওই সুপারিশের দেড় মাস পর অফিস ও ব্যাংকের কাজের সূচি বদলের সরকারি ঘোষণা এল।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সারা দেশে সময়সূচি ঘোষণা করে লোডশেডিং জারি থাকলেও এখন থেকে গ্রাম এলাকায় মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমন ধানের সেচ সুবিধার কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী ১০-১৫ দিন গ্রাম এলাকায় মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে সেচে ব্যাঘাত না ঘটে। তাছাড়া ওই সময়টি পিক আওয়ারও নয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে (আরইবি) এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটি কীভাবে আরো কার্যকর করা যায়, তার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোও সম্ভব হবে না। তবে অপরিহার্য কারখানাগুলো যেমন—গ্যাস, সার কারখানার উৎপাদনে যাতে সমস্যা না হয়, এগুলোয় যেন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close