ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগ থেকে উত্তরণে দেশের সবাইকে এক হয়ে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দুর্যোগ আসে এবং সেই দুর্যোগকে মোকাবেলাও করতে হয়। আজ এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণে দেশের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, আর আমাদের জীবন-জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা। আমি বিশ্বাস করি, এই দুঃসময় থাকবে না, এটি আমরা কাটিয়ে উঠব। আমাদের কল-কারখানাসহ সবই আবার চালু হবে এবং দেশের অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠবে। চিরদিনই অন্ধকার থাকে না, আলো নিশ্চয় আসে। আমরা আবার আলোর পথে যাত্রা শুরু করব।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারী যখন থামবে তখন আমরা খুলব। করোনা মোকাবেলায় আরও ২ হাজার চিকিৎসক এবং ৬ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে। আর এই দুর্যোগের সময় ব্যবসা পরিচালনার জন্য নেয়া ঋণের সুদ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই সুদগুলো যাতে স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মাফ করা যায় আর কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন সেটা বিবেচনা করা হবে।
দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের একখ- জমিও যাতে পতিত না থাকে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার বাইরে থাকা মানুষ যারা হাত পাততে পারে না, তাদের তালিকা দ্রুত তৈরি করার জন্যও দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারীতে কর্মহীন মানুষের সহায়তায় ভিক্ষার জমানো ১০ হাজার টাকা দান করে আলোচিত শেরপুরের সেই বৃদ্ধ নজিমুদ্দিনকে ‘বিশ্বের জন্য মহৎ দৃষ্টান্ত’ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এর থেকে আমাদের সবারই অনেক কিছু শেখার আছে।
করেনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সঙ্কট মোকাবেলার কার্যক্রম সমন্বয়ে সোমবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশবাসীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব জায়গায় করোনাভাইরাস বেশি নয়, ধীরে ধীরে সেসব জায়গাগুলো শিথিল করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারে। আপনারা (দেশবাসী) যদি নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এই সংক্রমণের হার কমাতে পারেন, যাতে মৃত্যুর হারও কমে, তাহলে আমরা আস্তে আস্তে আপনাদের যোগাযোগ, যাতায়াত, পণ্য পরিবহনসহ অন্যান্য কিছু উন্মুক্ত করে দেব। ইতোমধ্যেই পণ্য পরিবহনকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। যারা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে সবারই সহযোগিতা করতে হবে। সবাই মিলেই আমরা এই পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পাব, ইনশাল্লাহ।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধারাবাহিক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সোমবার রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সুপার, সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন, মসজিদের ইমাম, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। গণভবন প্রান্তে এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জলসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারী টিভি ও রেডিও চ্যানেলে ভিডিও কনফারেন্সটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে পাঁচ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৫১টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
/আরএম