দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৈরি সরকার: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন, ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘরও করে দেয়া হবে। এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণাও দেন সরকারপ্রধান।মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনের শুরুতেই ২৫-এ মার্চের গণহত্যার শিকার সকল শহিদকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপন হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মুহুর্তে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার করোনা ভাইরাস থেকে জনগনকে রক্ষা করা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড় সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ংকর ভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন। বাংলাদেশের ওপরও এই আঘাত আসতে পারে।
স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে জনসমাগম এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে জনস্বাস্থ্যর কথা বিবেচনা করে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনসমাগম হয় এমন সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব জেলায় শিশু সমাবেশ ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। এটি এখন বিশ্বের ১৯৫ টির মধ্যে ১৬৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই সংকটে নিম্ম আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে, সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাসানচরে এক লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবাও দেয়া হচ্ছে। আমি নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন। তবু আমি কয়েকটি বিষয়ের কথা আবারও উল্লেখ করছি। দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সকল পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২৬-এ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরবারি অফিস বন্ধ থাকবে।
কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে। ২৪-এ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে, যারা জনগণকে সেবা দেবেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৫ মার্চ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হই। এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস নেয়ার জন্য আমি সার্কভুক্ত দেশসমূহের নেতাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই। সার্কভুক্ত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো প্রস্তাবিত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে। আমরা একটি যৌথ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে বাংলাদেশ ১৫ লাখ ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
যেকোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এখনই সময় পরস্পরকে সহযোগিতা করার। ইতিহাসের সব দুর্যোগ-সঙ্কট বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছে জানিয়ে করোনা সংকটেও সবাই একসাথে কাজ করবে বলে আশা জানান প্রধানমন্ত্রী।
/এন এইচ