ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনাকালে দেশের তিন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গাদাগাদি করে বাস করছে শিশুরা। যারা বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আদালতের নির্দেশ এখানে আটক রয়েছেন। করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের মুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নেয় সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সমাজ সেবা অধিদপ্তর তিন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুদের তালিকা প্রস্তুত করে। সেই তালিকা পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। পাশাপাশি দেশের শিশু আদালতগুলোতে। এরপরই মামলার গুণাগুণ বিচার করে শিশু আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টগুলো এ পর্যন্ত ৩৭৮ শিশুকে জামিন দিয়েছেন। এদের মধ্যে জামিনে মুক্ত ৩৩৭ জন শিশুকে হস্তান্তর করা হয়েছে পরিবারের কাছে। আর শিশুদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর কাজে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে সহায়তা করেছে ইউনিসেফ।
সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে শিশু ধারণ ক্ষমতা ৬০০ জন। ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর পূর্ব পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছিলো ১ হাজার ১৪৭ জন শিশু। গত ১৬ কার্যদিবসে ৩৭৮জন শিশুকে জামিন দিয়েছে আদালত। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেও এখন কেন্দ্রগুলোতে ৯০৬ জন শিশু রয়েছে। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনশত শিশু বেশি রয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩০০ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে রয়েছেন ৫৭৯ জন। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে১৫০ জনের বিপরীতে অবস্থান করছে ২৩৮ জন। আর গাজীপুরের কোনাবাড়ি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে১৫০ জন মেয়ে শিশু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেখানে রয়েছে ৮৯ জন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান শাখার উপ-পরিচালক এম.এম মাহমুদুল্লা জানান, ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ শিশু রয়েছে। আদালতের জামিনে মুক্ত হয়েছে অনেকে। যার কারণে আমরা কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে পারছি। কারণ করোনা ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। কেন্দ্রের কোন শিশু যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য সবধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার বেশি শিশু থাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে নতুন কোন শিশু আদালতের মাধ্যমে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হলে তাদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা শাবনাজ জাহেরিন বলেন, করোনাকালে বিচারাধীন যেসব শিশু জামিনে মুক্তি পেয়েছে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। যেহেতু তারা জামিনে আছে এবং মামলার বিচার শেষ হয়নি সেজন্য সময়মত আদালতে হাজিরা দিতে পারে সেজন্য অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন,অনেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কিন্তু তাদের পরিবারের কেউ নিতে আসেনি। তাদেরকে শেল্টার হোমে রাখার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি শিশুদের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেয় সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস। কমিটির প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন কমিটি ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় শিশু আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক থাকা শিশুদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়। স্পেশালকমিটি তাদের নেয়া এইসব পদক্ষেপগুলো সময়ে সময়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অবহিত করে তার অভিমত গ্রহণ করে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করেন। শিশুদের পুরো সুরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করছে এই কমিটি। পাশাপাশি ভার্চুয়াল কোর্টের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ইউনিসেফ। একইসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তর কোর্ট অনুযায়ী শিশুদের তালিকাও প্রস্তুত করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পরবর্তীকালে শুনানি গ্রহণ করে এবং মামলার গুণাগুণ বিচার করে অভিযুক্ত শিশুদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে শিশু আদালতগুলো।
/আরএম