দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

করোনা-উত্তর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আসছে করছাড়ের বাজেট

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ গত দশ বছর দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল ঊর্ধ্বমুখী। প্রবৃদ্ধি ছিল আশাজাগানিয়া। ২০২৪ সালের মধ্যে ডাবল ডিজিটের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগোচ্ছিল। সেই আলোকেই সাজানো হচ্ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। রাজস্ব আহরণও প্রতিবছর বাড়ছিল। কিন্তু মহামারী করোনা ঝড় ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এমনকি ভোগেও আঘাত হেনেছে। এ অবস্থায় বাজেটের অতীত ধারাবাহিকতা থেকে সরে আসতে হচ্ছে সরকারকে। ঝড় মোকাবিলা করে টিকে থাকার কৌশল নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে করোনা থেকে উত্তরণ ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে আগামী বাজেটে। সে লক্ষ্যে ব্যাপক করছাড়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে বাজেট নিয়ে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বাজেট প্রণয়নের নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা মেনে সর্বক্ষেত্রে করছাড় থাকবে। সব পর্যায়ের বাণিজ্যিক কর্মকা- সচলে ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ব্যাপক হারে কর ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে দেওয়া হবে করপোরেট করহারেও ছাড়। পাশাপাশি কালোটাকা বিনাপ্রশ্নে আসতে পারে বিনিয়োগের সুযোগ। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, চলতি বিনিয়োগ আরও উৎপাদনমুখী করা, পদ্মা সেতুসহ দশ মেগা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নেরও কৌশল থাকছে আগামী বাজেটে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দ্রুত বাস্তবায়নে বাজেটে বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত আকার কিছুটা বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেটের মূল উদ্দেশ্য জনকল্যাণ। করোনা পরিস্থিতিতে আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। এ কারণে এবার জীবনমুখী বাজেট দেবে সরকার।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে শুল্ক-কর ছাড়ের ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রান্তিক করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনো কর দিতে হয় না। এই সীমা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে। এ ছাড়া সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া করপোরেট কর কমানোর দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথ থাকায় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে এখন পর্যন্ত এনবিআর করপোরেট কর না কমানোর পক্ষে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হবে। করদাতার চিকিৎসা ভাতায় করছাড় মিলবে। বর্তমানে মূল বেতনের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে করমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। এটি দ্বিগুণ করা হতে পারে। এ ছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার হতে পারে। তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানি খাতের উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ আগামী অথর্বছরেও অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়া মানুষের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী আমদানিতে আগামী এক বছর আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, আগাম ভ্যাট, অগ্রিম কর অব্যাহতির ঘোষণা থাকবে। জীবাণুনাশক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির কাঁচামাল আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close