দেশজুড়ে
করোনার মধ্যেও শক্তিশালী হয়ে উঠছে সূচকগুলো
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস মিলছে। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর অন্যতম আমদানি, রফতানি ও রেমিটেন্স সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠার মাধ্যমে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার সুফল মিলবে পুরো অর্থনীতিতেই। গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি খাত শক্তিশালী হলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে সাহায্য করবে। রেমিটেন্স দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করবে। আর রফতানি আয় বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। আর আমদানি বাড়তে থাকায় আশা করা হচ্ছে দেশে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুই-ই বাড়বে।
জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয়ও বেশি হয়েছে তিন কোটি মার্কিন ডলার। আর গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও আশানুরূপ অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে, রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার সুফল মিলবে পুরো অর্থনীতিতে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি খাত শক্তিশালী হলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে সাহায্য করবে। রেমিটেন্স দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করবে। ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি করবে। আর রফতানি আয় বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে। এছাড়া কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যে বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা ছিল রফতানি বাড়ার কারণে সেটা হবে না।’
একমাত্র রাজস্ব আয় ছাড়া অর্থনীতির সবগুলো সূচকই এখন উর্ধমুখী। আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির এই পাঁচটি সূচক অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালভাবে কার্যকর রয়েছে। তবে করোনার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ও মন্থর হয়ে পড়েছে। ফলে গত মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমে প্রায় ৩৫ শতাংশ। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে। ফলে ব্যাংক ঋণমুখী হয়ে পড়েছে সরকার। এখন সরকারের উচিত যে কোন উপায়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধে বিশেষ নজর দিতে হবে। করোনার কারণে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় সরকারের হওয়া উচিত তা যেন দুর্নীতিবাজ রাজস্ব কর্মকর্তাদের পকেটে না গিয়ে সরকারের ঘরে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সরকারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং ব্যাংকনির্ভরতা কমে যাবে।
করোনার ধাক্কায় সব দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে জানাই ছিল। কিন্তু মাত্রা কতটা হবে, তা নিয়ে নানা ধরনের পূর্বাভাস ছিল। ছিল নানা আলোচনা। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ নিজেদের এপ্রিল-জুনের জিডিপির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সংকোচন হয়েছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ইতিহাসে সর্বাধিক। আবার ইতালির ক্ষেত্রে মুছে গেছে প্রায় ৩০ বছরের প্রবৃদ্ধিই। সেই তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ।
জুন মাসে আমদানি বাড়ায় মনে হচ্ছে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর তেমনটি মনে করেন না। তিনি বলেন, করোনা শুরুর পর অনেক দেশ থেকে পণ্য আসেনি। আবার বন্দরে এসেও পড়ে ছিল। চীনসহ অনেক দেশের বাজার খুলে যাওয়ায় জুন মাসে এসব পণ্য এসেছে। এর ফলে আমদানি বেড়েছে।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, পোশাক কারখানাগুলো চালু আছে, অর্ডারও আসছে। তাই আমদানি বাড়বে। তবে আগের মতো চাহিদা এখন হবে না, ফলে আমদানিতে তেমন প্রবৃদ্ধি হবে না। এ জন্য নতুন বাজার নতুন পণ্য রফতানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে আমদানিও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪৮০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুন মাসে ৩৮৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। আর গত মে মাসে এসেছিল ৩৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে মে মাসের চেয়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে জুন মাসে। আর এপ্রিলে এসেছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা এক মাসের হিসাবে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। ওই অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ৯৯১ কোটি ডলারের। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানিতে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ২৫ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকাররা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশে রফতানি বন্ধ ছিল, যা এখন খুলে দেয়া হয়েছে। এ কারণে কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে, রফতানিও বাড়বে। এ ছাড়া সুরক্ষাসামগ্রী তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালও আমদানি হচ্ছে। এ কারণে আমদানি বেড়ে গেছে। তবে আগের মতো মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে না।