আমদানি-রপ্তানীপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

করোনার অজুহাতে এবারে রসুন নিয়ে বাণিজ্য

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। অন্যতম প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য রসুনের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রসুনসহ চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে রসুনের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। সর্বশেষ বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। হঠাৎ পণ্যটির দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। বিক্রেতারা বলছেন, চীনে করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে আমদানিকারকরা বাজারে রসুনসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে তৈরি হয়েছে সরবরাহ সংকট। তাছাড়া দেশি রসুনের মৌসুমও শেষ। বাজারে নতুন দেশি রসুন এবং আমদানি করা চীনা রসুনের সরবরাহ কম থাকায় দাম এত বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়বে। রসুনের পথে আছে আদা ও পেঁয়াজও।

খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের রসুনের বাজার পুরোটাই চীননির্ভর। চীনা রসুনের মান ভালো হওয়ায় এটির প্রতি চাহিদা বেশি। দেশে কিছু রসুন উৎপাদন হলেও চাহিদার বড় একটি অংশের জোগান দিতে হয় চীন থেকে আমদানির মাধ্যমে। করোনাভাইরাসের কারণে চীনে শিপমেন্ট বন্ধ। যারা আগে এলসি খুলেছিল, তাদের চালানও আসছে না। নতুন করে কেউ এলসিও খুলতে পারছে না। তার মধ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে আমদানিতে। এমন অবস্থা বেশি দিন চললে রসুনের দাম কয়েক গুণ হবে। দু’দিন আগে খাতুনগঞ্জে চীনা রসুন মানভেদে পাইকারিতে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২০৫ টাকা।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীন থেকে আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চীনে শিপমেন্ট বন্ধ আছে। যেসব ব্যবসায়ী আগে এলসি খুলেছিল তাদের চালানও আসছে না। নতুন করেও এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে সরবরাহ সংকটে রসুনের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে সংকট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে দামও।’ খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে রসুনের সংকট তৈরি হয়েছে। যে কারণে কিছুদিনের ব্যবধানে দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে প্রতিদিন কয়েক ট্রাক চীনা রসুন বাজারে ঢুকত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় রসুন আসছে না। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। বাজার চীননির্ভর হওয়ায় বড় সমস্যা হয়েছে।’ রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, দেশে সমুদ্রপথে আমদানি হওয়া রসুন শতভাগই আসে চীন থেকে। গত অর্থবছরে চীন থেকে ৬৪ হাজার ৭৯৬ টন রসুন আমদানি হয়। রসুনের মতো আদার ৬০ শতাংশই আমদানি হয় চীন থেকে। গত সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় চীন থেকে একটি বড় অংশ আমদানি করা হয়। কিন্তু ভাইরাসের প্রভাবে সেখানেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

নগরের বহদ্দারহাটে আসা চাকরিজীবী সোমা ইসলাম বলেন, এক কেজি রসুন যদি দুইশ’ টাকায় কিনতে হয় তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনব কীভাবে?’ অটোরিকশা চালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিনের সামান্য আয় দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তার মধ্যে হঠাৎ কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ভোগান্তির শেষ থাকে না।’

খাতুনগঞ্জের কয়েক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, পুরোটাই আমদানিকারকদের কারসাজি। করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে বাড়তি লাভের আশায় তারা বাজারে চীনা রসুন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। চীন থেকে জাহাজে পণ্য তুললে তা দেশে আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। আগে যেসব রসুন দেশে এসেছে, সেগুলো কোথায় গেল?

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সবসময় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফার জন্য অজুহাত খোঁজে। করোনাভাইরাসও তেমনি এদের কোনো অজুহাত কিনা, তা খতিয়ে দেখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। হঠাৎ রসুনের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষদের।’ রসুনের মতো চীন থেকে আমদানি করা আদা ও পেঁয়াজের দামও প্রতি কেজিতে বেড়েছে অনেক। গত বছরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে, যা পরে বিশ্বের ২৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১১শ’র ঘর ছাড়িয়ে গেছে।
/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close