দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
করোনাঃ গণপরিবহনে উঠে যাত্রীদের যা করণীয়
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক, হাত ধোয়ার কথা মানুষ শুনছে প্রতিদিন। আর করোনার থাবা থেকে বাঁচতে এছাড়া আর কোন রাস্তাও নেই। এদিকে বাস, রেল ও নৌযান চালু হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিবহন মালিকদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন বাসে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে, সকল গণপরিবহনে অন্তত তিন ফিট দূরত্বে যাত্রী বসানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে, বাহনগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে ইত্যাদি। কিন্তু এর সাথে যাত্রীদেরও অনেক করণীয় রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি পালনে যাত্রীদের করণীয়-
* সঠিকভাবে মাস্ক পরছেন তো?
সুরক্ষা দেয় এমন মাস্ক পরছেন কি না আর সঠিকভাবে সেটি পরছেন কি না তা অনেকেই খেয়াল করছেন না। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, “বাসা থেকে মাস্ক পরে যখন বের হবেন আর বাসে বসে ইচ্ছামতো সেটা খুলবেন, বারবার গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন, কথা বলবেন, আবার পরবেন সেটি কিন্তু ঠিক নয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাস থেকে নেমে অফিস বা বাসায় পৌঁছেই সবকিছুর আগে মাস্ক খুলে ফেলে দিতে হবে। খুলে রেখে দেয়া মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যাবে না।”
হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি বিভাগের শিক্ষক মোসাম্মাৎ নাদিরা পারভিন বলছেন, “বাজারে যে মাস্কগুলো পাওয়া যায় তা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। মাস্ক পরে মুখের সামনে হাত দিয়ে জোরে ফু দিলে যদি বাতাস লাগে তাহলে সেটি নিরাপদ নয়। সেক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই মাস্ক বানিয়ে নিতে পারি। নিজেরাই সুতি কাপড় দিয়ে তিন স্তর বিশিষ্ট মাস্ক তৈরি করে নিলে সেটা অনেক নিরাপদ হবে।”
* গ্লাভস যেভাবে ফেলবেন
করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হল হাত পরিষ্কার রাখা। নাদিরা পারভিন বলছেন গণপরিবহনে ওঠার সময় হ্যান্ডেল ধরতে হয়, অনেক সময় বাসের সিটের ওপর হাত দিতে হয়, টাকা ধরতে হয় যাতে করোনাভাইরাস থাকতে পারে। তাই হাতে গ্লাভস পরাই ভালো। এতে জীবাণু আপনা হাতে রাগবে না ও আপনি ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন।
এছাড়া ব্যবহার করা গ্লাভস কিভাবে ফেলবেন সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নাদিরা পারভিন বলছেন, “এক জোড়া গ্লাভস একবারই ব্যবহার করতে হবে। অফিসে বা বাসায় ঢোকার আগেই সেটি ফেলে দিতে হবে। গ্লাভস খোলার সঠিক নিয়ম হচ্ছে উপরের দিক থেকে ধরে টান দিয়ে উল্টো করে খোলা এবং উল্টো করেই সেটি ফেলতে হবে।”
* ব্যাগ বহন না করা
অফিসে বা অন্য কাজে যাওয়ার সময় অনেকেই সাথে ব্যাগ বহন করেন। অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, সেটি না করাই ভাল। কারণ ব্যাগ ধুয়ে পরিষ্কার করা মুশকিল। তাই যতটা সম্ভব কম জিনিস নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া ভালো।
* পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরুন
“চলাচলের সময় এমন পোশাক পরা উচিৎ যাতে শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢাকা থাকে। যেমন ফুলহাতার শার্ট বা কামিজ পরা, টি-শার্ট না পরা, জুতো-মোজা পরা উচিৎ, বলে মনে করেন নাদিরা পারভিন।” কেননা, মাস্ক, গ্লাভস ও চোখে চশমা থাকলে অনেকটা সুরক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া বাড়ি গিয়ে পোশাক সাথসাথে ধুয়ে ফেলার কথা বলছেন তিনি।
* পথে কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকা
গণপরিবহনে উঠে অনেকেই বাদাম, চানাচুর, কাটা শসা ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। সাধারণত হকারদের কাছ থেকে এসব কেনা হয়। কিন্তু এখন বাইরের খাবার একদমই খাওয়া উচিৎ না। কারণ খাবার যিনি প্রস্তুত করছেন, যিনি বিক্রি করছেন তাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রয়েছে কিনা তা জানা সম্ভব নয়।
* থুথু ও কফ না ফেলা
বাংলাদেশে অনেকেই প্রকাশ্যে রাস্তায় থুথু ও কফ ফেলে থাকেন। গণপরিবহনের জানালা দিয়েও অনেকে সেটি করছেন। থুথু ও কফে করোনাভাইরাস থাকতে পারে। তাই মুখে টিস্যু চেপে ধরে হাঁচি, কাশি দেয়া ও কফ ফেলা উচিত। এবং ব্যবহৃত টিস্যু পলিথিনে রেখে দিয়ে বাস থেকে নামার পরে সেটি সঠিক জায়গায় ফেলা উচিত।
* জুতোর নিচেও মনোযোগ দিন
রাস্তায় কফ ও থুথু ফেলা হলে সেটি শেষ পর্যন্ত জুতোর নিচে করে আপনার বাড়িতে অথবা গাড়িতে পৌঁছে যায়। গণপরিবহন ব্যবহার মানে বহু মানুষের পায়ের জুতো তাতে উঠেছে ও নেমেছে। তাই জুতোর নিচের অংশ পরিষ্কার করার জন্য যানবাহনের প্রবেশদ্বারে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রাখা দরকার। যানবাহন থেকে নেমে অফিস বা বাড়ির বাইরেই একই ভাবে জুতো পরিষ্কার করে নেয়ার কথা বলছেন মোসাম্মাৎ নাদিরা পারভিন।
* দূরত্ব বজায় রাখুন
বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে একে অপরের থেকে ছয়ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের সেটি তিনফুট। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে সেটিও মেনে চলা কঠিন ব্যাপার। কিন্তু করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যত পদ্ধতির কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পন্থা বলা হচ্ছে মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। আর সেজন্যেই দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। সূত্রঃ বিবিসি
/এন এইচ