বিশ্বজুড়ে

কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে মিয়ানমারের জন্যে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রোহিঙ্গা মুসলমানসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু অন্যান্য ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীর ওপর জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারীদের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা। ওই অপরাধগুলোর মূল হোতা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ‘বার্মা ইউনাইটেড থ্রো রিগোরাস অ্যাকাউন্টিবিলিটি (সংক্ষেপে বার্মা অ্যাক্ট-২০১৯)’ নামে একটি বিলের বিষয়ে আগামীকাল সোমবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ‘জেনোসাইড’, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের শিকার হওয়ার অভিযোগ ওই বিলে এসেছে সুনির্দিষ্টভাবে। জেনোসাইডবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে ‘জেনোসাইড’ ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত কারণে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো মিয়ানমারে জেনোসাইড সংঘটনের বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে বিলটি গৃহীত হলে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন আইন প্রণেতারা।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে নতুন মাত্রায় রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ এবং সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পটভূমিতে প্রস্তাবিত ‘বার্মা অ্যাক্ট-২০১৯’ শীর্ষক বিলে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। ৪৮ পৃষ্ঠার ওই বিলে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্টের’ আওতায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া তিনি বার্মিজ ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি অ্যাক্ট, টম ল্যান্টোস ব্লক বার্মিজ জেইড (জান্তা’স অ্যান্টি-ডেমোক্রেটিক ইফোর্টস) অ্যাক্টসহ এ সম্পর্কিত আইনগুলোর আওতায় মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশন ও ইউনিয়ন অব মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংসহ মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।

জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক তদন্তদল গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপন করা প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুযোগ আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার বিবেচনাধীন বিলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার আহ্বান রয়েছে। বিলটি গৃহীত হওয়ার আট বছর পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে—এমন তথ্যপ্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কংগ্রেস কমিটিকে দিতে পারলে সামরিক সহায়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর মিয়ানমার বাহিনীর বর্তমান বা সাবেক কোনো সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে বা সামরিক বাহিনীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁরা অন্তত আট বছর যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না। কারো বৈধ মার্কিন ভিসা থাকলে সেগুলোও বাতিল হবে। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলে সেগুলোও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের খনিজসম্পদের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব রয়েছে বিলে।

প্রস্তাবিত বার্মা অ্যাক্টে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কাজের অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অন্যত্র স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গাসহ অন্য নৃগোষ্ঠীগুলোর ওপর জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের হোতাদের চিহ্নিতকরণ, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ-বিশ্লেষণ ও বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করতে মার্কিন প্রশাসনকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধিসভার বিবেচনার জন্য আগামীকালের কার্যতালিকায় প্রথমেই আছে ‘বার্মা অ্যাক্ট’। গত ১১ জুন প্রতিনিধিসভায় ওই বিলটি এনেছিলেন নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসম্যান এলিয়ট ইঙ্গেল। এরপর  প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত ২০ জুন এটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সবুজ সংকেত দেয়। গতকাল শনিবার বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ৫৩ জন কংগ্রেসম্যান (৪০ জন ডেমোক্র্যাট ও ১৩ জন রিপাবলিকান) ওই প্রস্তাবের সহপৃষ্ঠপোষক হয়েছেন। বিলটি কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটের বিবেচনার জন্য প্রতিনিধিসভার ৪৩৫ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ২১৮ জনের সমর্থন পেতে হবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের অনেকে ওই বিলটির পক্ষে ভোট দিতে মার্কিন আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close