প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে

ওড়িশায় যেভাবে ঘটলো ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা?

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক:ভারতের ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৯০০ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ একাধিক ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যায় বালেশ্বরের কাছে বেলাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটে তার একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এপি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার নির্ধারিত সময়েই হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার জনপ্রিয় ট্রেনগুলোর মধ্যে অন্যতম করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বহু মানুষ প্রতিদিন ওই ট্রেনে চড়ে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান চিকিৎসার জন্য।
ঘড়ির কাঁটা তখন ৭টা পেরিয়েছে মাত্র। ওড়িশার বালেশ্বর স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ বিকট শব্দ। ক্রমশ গতি কমতে থাকে করমণ্ডলের। একাধিক কামরা ডান দিকে হেলে পড়তে থাকে।
ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী জানান, গতি কমার সঙ্গে সঙ্গেই কামরা হেলে যাওয়া টের পেতেই হুড়োহুড়ি শুরু কামরার মধ্যে। ততক্ষণে আরও খানিকটা হেলে যায় কামরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রায় এক কিলোমিটার পথ এ ভাবেই ধীরে ধীরে এগোতে থাকে ট্রেনটি।

করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কামরা গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনের ওপর। ডাউন লাইনের ওপর আড়াআড়ি গিয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরা। ততক্ষণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, একটি মালবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে চলছিল। কোনওভাবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা দেয় সেই মালগাড়ির পেছনে।

মালগাড়ির পেছনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস টেনটি এত জোরে ধাক্কা দেয় যে, এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির কামরার উপরে ওঠে যায়। পেছনে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটির বেশির ভাগ কামরা।

সেই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যা লাইনের ওপর আড়াআড়ি পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরার ওপর দিয়ে চলে যায়। ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডলের কামরার সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয়ে যায় হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক কামরা। ছিটকে পড়েন ট্রেনের ভিতরে থাকা যাত্রীরা।

দুর্ঘটনার অন্য একটি ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে রেলকর্মীদের বক্তব্যে। তাদের দাবি, প্রথমে লাইনচ্যুত হয় বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হাওড়াগামী ট্রেনের কয়েকটি কামরা আপ লাইনে এসে পড়ে আড়াআড়িভাবে। সেই সময় আপ লাইনে ছুটে আসছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়াগামী ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া কামরার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দ্রুতগতিতে ছুটে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের।

এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে অন্য পাশের লাইনে (থার্ড লাইন) দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।

দুর্ঘটনার জেরে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে একটি অংশ আটকে পড়েন ছিটকে পড়া কামরায়। প্রাথমিকভাবে ট্রেনের যাত্রীরাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। অন্ধকারে সমস্যা বাড়ে।

দুর্ঘটনা যে এলাকায় হয়েছে সেই এলাকাটি নির্জন। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মানুষ ছুটে এসে উদ্ধারকাজে নামতে পারেননি। কিন্তু একটু সময় যেতেই হাজির হতে থাকেন আশপাশের বাসিন্দারা।

ট্রেনের যাত্রীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু সেই সময় মূল সমস্যা হয় আলোর স্বল্পতা। ট্রেনের কোনও আলো জ্বলছে না। টর্চ এবং মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে শুরু হয় উদ্ধারকাজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল দেহাংশ, যাত্রীদের জিনিসপত্র, খাবার। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কামরা থেকে ভেসে আসতে থাকে কান্না, চিৎকারের শব্দ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় রেলের উদ্ধারকারী দল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। ওড়িশায় দুর্ঘটনার জেরে হাওড়া, শালিমার থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন চলাচল বাতিল করে দেয়া হয়।

রেল সূত্রের দাবি, ৫১টি ট্রেন ঘুরপথে বা সংক্ষিপ্ত পথে চালানো হচ্ছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথও বদলে দেয়া হয়।

বাতিল হওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরীগামী আপ জগন্নাথ এক্সপ্রেস, আপ পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল। শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেসও বাতিল করা হয়েছে। হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে শালিমার-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস এবং শালিমার-হায়দরাবাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close