প্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য
এ বছরের বাজেট আমাদের টিকে থাকার বাজেট
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ‘এ বছরের বাজেট আমাদের টিকে থাকার বাজেট। চলমান পরিস্থিতিতে আমরা যদি কোনোমতে টিকে যেতে পারি, সেটাই হবে আমাদের লাভ। এ কারণে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এসব খাত শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং ভবিষ্যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনই বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত জাতীয় বাজেট পূর্ববর্তী বিশ্লেষণের ওয়েবিনারে (ওয়েব-সেমনিার) এমন মতামত দেন দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষক ও ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এনডিসি, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী ও এনবিআর সদস্য (ট্যাক্স সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন) রঞ্জন কুমার ভৌমিক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে এমন মতামত দেন।আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন আকন্দ এফসিএমএ-এর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ফাইন্যান্স বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম এফসিএমএ।
আইসিএমএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মামুনুর রশীদ এফসিএমএ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ এর প্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা-সম্পৃক্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়াও এতে অংশ নেন লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের এসইভিপি ও হেড অব অপারেশন এ কে এম কামরুজ্জামান এফসিএমএ। জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ এর প্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা-সম্পৃক্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ১৩টি মূল প্রস্তাব দেয়া হয়।
কোম্পানি রিটার্নের সাথে ‘কস্ট স্টেটমেন্ট অ্যাকোম্পানিড বাই কোয়ান্টিটেটিভ অ্যানালিসিস স্টেটমেন্টস কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএমএ) কর্তৃক নিরীক্ষাকৃত সনদ’ সংযোজনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। চলমান পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়ের পরিমাণ আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন চার লাখ করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়।খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, শিল্পায়ন ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন, গার্মেন্টস সেক্টরে বিশেষ সুবিধা প্রদান, পরিবহন ও বিমান শিল্পে বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেয়া হয়।মামুনুর রশীদ তার প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে একে শক্তিশালী করে তোলার প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে নতুন করে সাজাতে হবে, যাতে করে চলমান সংকট এবং ভবিষ্যত পরিস্থিতির যথাসম্ভব মোকাবিলা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাজেট প্রস্তাবনায় পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আলোকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতকে যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, এ বছরের বাজেটকে আমি বলব হেলথ বাজেট, এটি আমাদের বেঁচে থাকার বাজেট। আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়েও যথাযথ গুরুত্ব প্রদান এবং এ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পালনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি। চলতি বছরের বাজেটকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং এই চলমান সংকটকে মোকাবিলা করে টিকে থাকার বাজেট হিসেবে উল্লেখ করতে চাই। এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারলে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ক্ষতিও মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে অনেক দায়িত্ব আছে— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম প্রণয়ন করা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিভিন্ন খাতে আমাদের কিছু ব্যয় হয় যেগুলো একেবারেই প্রয়োজনীয় নয়। এই ধরনের ব্যয়গুলো যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্য খাত এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ব্যয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনিও। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য যে সমস্ত খাত বন্ধ থেকেছে, এগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে যাতে করে এগুলো টিকে থাকতে পারে।
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছরের বাজেট অন্যান্য যেকোনো সময়ের বাজেটের চেয়ে ভিন্ন। এবারের বাজেটের নিরূপণ হওয়া উচিত স্বাস্থ্য, মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটকে সামনে রেখে। এই বিষয়গুলো এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, কর প্রদানের বিষয়ে আমাদের যথাযথ জ্ঞান সৃষ্টি হওয়া খুবই জরুরি। অনেকেই এ বিষয়ে যথাযথ সচেতন থাকেন না। আমাদের মধ্যে যারা উপযোগী তাদের অবশ্যই কর প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি নিজস্ব দায়িত্ব পালন করা উচিত। আর এজন্য ট্যাক্স অথরিটিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে করে রাজস্ব বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ২৭ কোটি লোক চাকরিহীন হয়ে পড়বে বলে আইএলও’র পরিসংখ্যানে এসেছে। বাংলাদেশেও এই সংকট আসবে। এ প্রেক্ষিতে সরকার বেশ কয়েকটি খাতে এরই মধ্যে সহায়তা প্রদান করেছে। বাজেটের ক্ষেত্রেও এই বিষয়গুলোর প্রতিফলন আশা করেন তিনি।
বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আলিবাবা’র কর্ণধার জ্যাক মা’র বক্তব্য এবং ড. আতিউর রহমানের বক্তব্যের আলোকে আইসিএমএবি কাউন্সিল সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ বছরের বাজেট আমাদের টিকে থাকার বাজেট। চলমান পরিস্থিতিতে আমরা যদি কোনোমতে টিকে যেতে পারি, সেটাই হবে আমাদের লাভ। আর তা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আগামী বছর আমাদের জন্য সাফল্যময় এক সোনালি বছর হবে।’
করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
/এন এইচ