স্বাস্থ্য

এ গরমে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচুন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ গরমে বাইরে গেলে মুখে একটা কথাই বের হয়, উফ, কি গরম! প্রচণ্ড রোদে গরম তো পড়বেই। এতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় লবণ বেরিয়ে যায়। লবণ ও পানির পরিমাণ কমে গিয়ে শরীরে তৈরি হয় ডিহাইড্রেশন। আবার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও পড়তে হয় শারীরিক ঝুঁকির মধ্যে। তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে সূর্যের প্রখর খরতাপ ও ক্লান্তি থেকে। ডিহাইড্রেশন আর তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। গরমের মধ্যে এটা বেশ বড় সমস্যা। আর দেহের এ ডিহাইড্রেশন ও দেহের তাপমাত্রার তারতম্যই হলো হিটস্ট্রোকের প্রধান কারণ। সাবধানতাই হতে পারে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার বড় উপায়।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে যারা রয়েছে

ছোট শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি, যাদের দেহের ওজন বেশি, যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ বেশি করেন তাদের প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। শিশু ও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাবধানে থাকা তে হবে। কারণ তাদের শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বড়দের মতো নয়।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগে বুঝবেন কীভাবে

প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ শরীরে ক্লান্তিবোধ হওয়া, প্রচণ্ড তৃষ্ণা পাওয়া ও গলা শুকিয়ে মাথা ঘোরা, মাথা ঝিমঝিম করা ও বমি বমি ভাব হওয়া, মাথাব্যথা আর চোখে ঝাপসা দেখা, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা ও খিঁচুনি হওয়া। এগুলো দেখলেই সাবধান হতে হবে।

হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা খুবই জরুরি

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে শরীরের ভারি জামাকাপড় খুলে দিতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে তৎক্ষণাৎ পানি খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে ডাবের পানি, স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

একটু পর পর দেহের তাপমাত্রা দেখতে হবে। চেষ্টা করবেন শরীরের তাপমাত্রা কোনোভাবেই যেন ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না ওঠে। প্রয়োজনে রোগীর ঘাড়ের নিচে, হাতের তালুতে, পেটের নিচের অংশে বরফ দিতে হবে। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে এসময় আক্রান্ত রোগীকে কোনোরকম জ্বরের ওষুধ বা প্যারাসিটামল দেওয়া যাবে না। এতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। শরীরের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে তখনই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে না চাইলে

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে একটু পর পর পানি পান করতে হবে। যদিও রোজার মধ্যে একটু পর পর পানি খাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সেহেরিতে বেশি করে পানি খেয়ে নেবেন। যাতে করে দিনে কোনোভাবেই পানিস্বল্পতার সমস্যা না হয়।

শরীর থেকে বেশি ঘাম ঝরলে ডাবের পানি, ফলের জুস বা স্যালাইন পানি খেতে হবে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গরমে সবসময় আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। ভারি কাপড় বা কালো রঙের পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই গরম এবং রোজায় ফ্যাশনকে কম প্রাধান্য দিয়ে শরীরের সুস্থতার দিকে প্রাধান্য দিন।

সম্ভব হলে দিনে দুই থেকে তিনবার গোসল করতে হবে। এতে শরীর ক্লান্ত হবে না। আপনার মাথা ঠাণ্ডা হবে। আর পর্যাপ্ত ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলমূল ও খাবার খেতে হবে। সবসময় গরম খাবার এড়িয়ে ঠাণ্ডা খাবার খেতে হবে। ভাত, কম তেল-মশলায় রান্না মাছ বা মাংস, ডিম, প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে পারেন।

প্রয়োজনের বাইরে রোদের মধ্যে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। ছাতা, টুপি, পানি, সানগ্লাসব্যাগে এই গরমে কয়েকটা জিনিস ব্যাগে রাখুন। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

তাপমাত্রার পরিবর্তন খেয়াল রাখুন। নিজের চারপাশের তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রখর রোদের মধ্যে যাবেন না। আবার প্রখর রোদ থেকে বেরিয়েই ঠাণ্ডার মধ্যে চলে যাবেন না। কারণ তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনের সাথে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে না পারার কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close