শিক্ষা-সাহিত্য
এশিয়ায় শিশুদের বিদেশ বা বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে পড়াশুনো করানোর প্রবণতা বাড়ছে
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ তখন বয়স মাত্র ১২ বছর ছিল ফিলিপ সোয়েই। সেই সময়েই তাঁর বাবা-মা তাঁকে পশ্চিম ম্যাসাচুসেটসের পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়তে পাঠান। পাহাড়ের কোলের ওই বিদ্যালয়টি তাঁর বাড়ি থেকে ৭,০০০ মাইল দূরে ছিল যেখানে তাঁর বাবা-মা পড়তে পাঠিয়েছিলেন।
২৩ বছর বয়সের সোয়েই বলেন,”সেই দিনগুলি ভাবলেই আতঙ্ক হয়। আমি যেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছি তাই মনে হচ্ছিল। সেইসময় আমি শুধু দিনগুলির গণনা করেছি।” তবুও, তিনি জানতেন যে ডেরফিল্ডের অল-বয়েজ ইগলব্রুক স্কুলে পড়াশোনা করা তাঁর “কর্তব্য”। বর্ধিষ্ণু (Wealthy Asian families) এশীয় পরিবারগুলি তাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে সোনার টিকিট হিসাবে দেখছে, তবে ক্রমশই শিশুদের এই ইঁদুর দৌড়ে সামিল করার প্রবণতা বাড়ছে, সব অভিভাবকরাই চাইছেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা শীর্ষে স্থান করে নিক, ফলে চাপ বাড়ছে শিশুদের উপর।
সংখ্যায় নগণ্য হলেও, কিছু বিদ্যালয় শীর্ষ বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্যে দিক নির্দেশ করে শিশুদের। যারা বছরে ৭৪,০০০ ডলার হিসাবে চার্জ নেয় এবং এমনভাবে তাঁদের প্রস্তুত করে দেয় যাতে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তাঁরা পড়াশুনোর চেষ্টা করে।
“এটা খুব স্বাভাবিক যে ভাল স্কুলে ভর্তির জন্যে বর্ধিষ্ণু পরিবারগুলির জুনিয়র বোর্ডিং স্কুলগুলির উপর নির্ভর করে” বলেন শিক্ষা পরামর্শদাতা তথা ডানবার কনসালট্যান্টের অংশীদার রিক ডিকসন ।
২১ বছরের জন রাওকেও খুব ছোটবেলায় পড়াশুনো করার জন্যে বাড়ি থেকে অনেক দূরে যেতে হয়েছিল। চিনের পরীক্ষা-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার উপর ভরসা করতে পারেননি তাঁর পরিবার, তাই তাঁর বাবা, যিনি একটি প্রযুক্তি সংস্থা চালাচ্ছিলেন, তাঁকে বিদেশে পড়াশোনা করতে পাঠান। তবে রাওয়ের মনে হয়েছিল, ম্যাসাচুসেটস এর মার্লবারোয়ের হিলসাইড স্কুলে পড়াশোনা শিখে তাঁর ভালই লেগেছিল। কিন্তু এক দশক আগেও, বিশ্ব জুড়ে পরিবারগুলির বাচ্চাদের বাইরে পড়তে পাঠানোর প্রবণতা অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন তা ক্রমশই বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে তাদের বাচ্চাদের অর্ধেকটা পাঠানো খুব বিরল ছিল।
পূর্ব এশিয়ার শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক মাধ্যমিক শিক্ষার্থী, তবে বিদেশে পড়াশুনো করার এই প্রবণতা মূলত চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেই বেশি দেখা যায়। ২০১৮ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সমস্ত আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়গুলিতে শুধুমাত্র চিনেরই ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশুনো করছেন বলে জানা গেছে।
এশিয়ার দেশগুলির অভিভাবকদের মধ্যে বিদেশের বিদ্যালয়গুলিতে (Study abroad) ভর্তি করে নিজের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো করানোর প্রবণতা বাড়ছে বলেই জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা।