দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
এপ্রিল মাসটা খুবই দুঃসময়ের, আসতে পারে বড় ধাক্কা: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসতে পারে। পরিসংখ্যা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এপ্রিল মাসটা নিয়ে চিন্তায় আছি। এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য খুবই এক দুঃসময়ের মাস আসছে। সেটাই খবর পাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস বিশ্বে প্রলয়ের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এ ভাইরাসকে মোকাবিলা করতেই হবে।’
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।
দেশের খেটে খাওয়া ও স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা দিন আনে দিন খায় সেই ধরনের সামান্য আয়ের মানুষগুলোর টাকা কামাই এখন বন্ধ হয়ে আছে। বহু লোক এখন কষ্ট করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিয়েছি। এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
দেশের এই দুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যে যেখানে পারেন কিছু শাক-সবজি উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদাটা মেটান। উদ্বৃত্ত থাকলে সেগুলো দিয়ে কারও চাহিদা হলে তাদেরকেও দিন। সেইভাবেই সবাই প্রস্তুতি নিন। মুরগির খামার, মাছের ফার্ম, ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প চলমান রাখুন। আমরা গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল নিয়ে জনগণের সুবিধার কথা ইতোমধ্যে ভেবেছি।’
দুঃসময়ে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অর্থবিত্ত কিন্তু লুকিয়ে রাখা যায় না। যারা এই দুঃসময়ে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে তাদেরকে কিন্তু আমি এতটুকু ছাড় দেবো না। আমরা কষ্ট করে গরিবের জন্য অর্থ-খাদ্য দেবো, সেটা যেন গরিবের হাতে পৌঁছায়।’
করোনা ভাইরাসে বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এত এত ধন-সম্পদ, এত এত অস্ত্র-শস্ত্র আজ কোথায় গেল? কোথায় গেল বিশ্বের এত এত শক্তি? শক্তি নাই, শেষ। প্রবল শক্তিশালী করোনার ভাইরাসের কাছে সব শক্তি শেষ। বিশ্বের কোনও শক্তিশালী দেশই আজ কিছু করতে পারছে না।’
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার সময় মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এখনও ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়ায়নি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে সামনে যে ভয়াবহ দিনগুলো আসছে বাংলাদেশ সেটাও মোকাবিলা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এসময় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক-নার্সসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে লড়াই করছেন তাদের জন্য বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হলে পদবি অনুযায়ী তাদের ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে। সৃষ্টিকর্তা না করুন, যদি কেউ চিকিৎসা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তবে তাকে পদবি অনুযায়ী ওই টাকার ৫ গুণ দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা এই সময়ে দায়িত্ব পালন করছেন না তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবে কিনা সেটাও দেখা হবে।’
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছিল। এর ১১ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ দেশে প্রথম কোনও ব্যক্তি এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সবশেষ গতকাল সোমবার জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন। ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
/একে