প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনশিক্ষা-সাহিত্য

এক নৌকা, শত স্বপ্ন; পানিতে ঘেরা পাঠশালার গল্প (ভিডিও সহ)

শ্রেষ্ঠ খান, নিজস্ব প্রতিবেদক: চারপাশে অথৈই পানি। মাঝখানে ৩ তলা ভবেনর পাঠশালা। আর দূর দুরান্ত থেকে একটি নৌকায় করে স্বপ্ন নিয়ে শত শত শিক্ষার্থী হাজির হয় সেখানে। শুধু পড়ালেখাই নয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নিয়ম করে সব কাজ চলতে থাকে, সাধ্য মতো। স্বপ্ন জয়ের এমন গল্প কোন কাল্পনিক ও দূর দেশের নয়। দেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের হাওরের একটি বিদ্যালয়ের গল্প। নাম ‘বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়’।

ছবি: নৌকা করে বিদ্যালয়ে আসছে ছাত্র-ছাত্রীরা।

বাজিতপুরের উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ হাওরের এই বিদ্যালয়টি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আওতায় মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালে নির্মিত। তিন তলা হলেও, নীচতলা খালি। যেতে হলে নৌ পথ ছাড়া, বিকল্প নেই। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন প্রাঙ্গন, ছাদের গোছানো পরিবেশ আর প্রকৃতির আলো বাতাস ঘেরা এ স্কুলটি যে কারো নজর কাড়বে এক পলকেই। বছরের ৯ মাস এমন পরিবেশই বজায় থাকে। দীর্ঘ ৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশবাসীর কাছে স্কুলটি প্রায় অচেনা।

ভিডিও দেখুন:

আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এই বিদ্যালয়ের লেখাপড়া করে। প্রতিদিন একটি নৌকা করে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। দেখতে বা ভাবতে ভালো লাগলেও, রয়েছে আতঙ্ক, ঝুঁকি ও পানিতে পড়ে যাওয়া ভয়। অভিভাবকদের সঙ্গে দুচিন্তায় শিক্ষকরাও।

ছবি: নৌকা ছেড়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা।

ঘুরে দেখা যায়, অথৈই পানির দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ছোট ঢেউয়ের বলয় ভেঙ্গে নৌকায় করে নীল-সাদা’র একঝাক সাহসী কিশোর-কিশোরী আসছে। তাদের রোদ-বৃষ্টি থেকে কিছুটা আড়াল করতে নৌকার উপরে টাঙ্গানো রঙ্গিন কাপড়। ইঞ্চিনের নৌকাটি বিদ্যালয়ের সিড়িতে ধাক্কা লাগার আগেই ছোট ছোট পায়ে লম্বা কদমে হাজির হচ্ছে বিদ্যালয় প্রঙ্গনে। তারপর শ্রেণী কক্ষে, চলছে পাঠদান। মধ্য বিরতিতে ভবনের ছাদের টপে লাগানো সবুজ গাছের ভালোবাসায় থাকছে কিছুক্ষণ। ইট পাথরের মাঝে লাল-হলুদ ফুলের সমারহে প্রকৃতির যেন আপন মহিমা এখানে।

ছবি: শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা।

পানির কলকাকলী, মৃদু বাতাসের সঙ্গে গুছানো বিদ্যালয়ের অপূর্ণতাও কম না। সব কিছুর মাঝেও কোমলমতী শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট জায়গাতেই আটকে গেছে শৈশব। নেই খেলার সুযোগ, নেই দুরন্তপানা। তার উপর ঝুঁকি নিয়ে পারাপার।

শিক্ষার্থীরা বলেন, চারদিকে পানি, নৌকা দিতে আসতে খুবই ভয় লাগে। যদি যাতায়াত ব্যবস্থা আরেকটু ভালো হতো। আরও একটি বড় নৌকা থাকতো তাহলে সুবিধা হতো।

শিক্ষিকা জানান, প্রতিদিন আসা-যাওয়ায় প্রায় ৪ ঘন্টা সময় চলে যায়। এত কষ্ট বলার অপেক্ষা রাখে না।

অভিভাবকরা জানান, আমার ছেলে মেয়ে যখন নৌকায় উঠে, তখন ভয়ে অস্থির থাকি। কখন যেন দুর্ঘটানার ঘটে, এমন শঙ্কা তাড়িয়ে বেড়ায়।

এদিকে বিদ্যালয়টি মুল সমস্যার সাথে রয়েছে বিজ্ঞানাগারে সমস্যা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকায়, পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। তবে এতো কিছুর মাঝেও সাধ্য মতো চার দেয়ালের মাঝে আনন্দ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বজায় রাখার চেষ্টা করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ছবি: বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম জানান, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারী যারা আছেন, অনেক দুর থেকে কষ্ট করে এখানে আসেন। থাকার কোন জায়গা নেই। সময় মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া, বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে নতুন আশার কথা বলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, পরিদর্শনে যাবো। এছাড়া এই মৌসুমেই আরও দুই নৌকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যালয়টি মাল্টিমিডিয়ার আওতায় নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close