দেশজুড়ে
এক নোটিশেই গ্রামীণ টেলিকমের ৯৯ কর্মী ছাঁটাই
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ এক নোটিশেই ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম। পাওনা চেয়ে মামলা করায় এমনটা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা।
গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা জানান, কোনো প্রকার নোটিশ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএ এর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশের মাধ্যমে ৯৯ কর্মী ছাঁটাই করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গ্রামীণ টেলিকম ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশ এর মাধ্যমে এই ছাঁটাই করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরবর্তীতে বকেয়া পাওনা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯৩টি মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের বর্তমান কর্মীরা। ঢাকার শ্রম আদালতে সব মিলে ১০৭টি মামলা করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৪ কর্মী আরও ১৪টি মামলা করেন পাওনা টাকার জন্য।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ার আছে গ্রামীণ টেলিকমের। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব পল্লীফোন ছাড়াও নকিয়া মোবাইলের সার্ভিস দিয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কর্মীদের মাঝে বণ্টন করে দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের মুনাফা হয়েছে ৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা কিন্তু এ নিট মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মীদের, প্রতিষ্ঠান এর কল্যাণ তহবিল ও সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও ৮০ঃ১০ঃ১০ অনুপাতে পরিশোধ করার বিধান থাকলেও তা পরিশোধ করা হয়নি।
সেইসাথে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও শ্রম অধিদফতরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর হতে সরকারের পাওনা টাকা চেয়ে বারবার চিঠি দিয়ে তাগাদা দিলেও কোনো প্রকার কর্ণপাত করেনি গ্রামীণ টেলিকম। উল্টো শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে এক নোটিশ এর মাধ্যমে ৯৯ জন কর্মচারী ছাঁটাই করা হলো।
তার মধ্যে শ্রম অধিদফতর কর্তৃক নিবন্ধনকৃত গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) এর ইউনিয়ন সদস্য ও নেতারাও রয়েছেন।
ছাঁটাই সম্পর্কে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গত ২৫ তারিখ এক চিঠিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ৭ জন কার্যকরী সদস্য রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী ও ইউনিয়ন এর কার্যকরী সদস্য ছাঁটাই সম্পূর্ণ বেআইনি। করোনাকালীন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এভাবে বন্ধ করতে পারেন না, আমরা আইনিভাবে ও আন্দোলনের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করবো।’
তিনি আরও বলেন, গতকাল পূঁজার ছুটি শেষে অফিসে গেলে গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন এর ভাড়াটে লোকজন এসে উপস্থিত হয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ সৃষ্টি করে একটি আবেদন ফর্মে স্বাক্ষর নেন। এখন ফোন করে সকল কর্মীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে যাতে তারা কোনো প্রকার আন্দোলন ও ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে না পারেন। ইউনিয়ন ধ্বংস করতে ও ছাঁটাইয়ের বৈধতা নিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন।
ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ইউনিয়ন এর ভবিষ্যৎ ও এতগুলো কর্মীর পরিবার কঠিন বিপদের সম্মুখীন। সরকারের সহযোগিতা না পেলে এতগুলো লোক একসাথে না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করছি।
শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কামরুজ্জামান অ্যাপোলো বলেন, ‘ড. ইউনুস স্যার একজন সম্মানিত লোক, তারমতো একজন মানুষের পক্ষে বেআইনি কাজ মেনে নেয়া যায় না। গ্রামীণ টেলিকম একটি লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়াও হয়ে যায়নি। তাই এমন প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে সকল শ্রমিক ছাঁটাই সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা তার কাছে অনুরোধ করছি অনতিবিলম্বে এই অবৈধ টার্মিনেশন তুলে নেন নতুবা আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করবো।’
তিনি আরও বলেন, তার প্রতিষ্ঠান শ্রম আইন মানে না এটা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এর তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। সেই ১২টি লঙ্ঘন এখনো পরিপূর্ণ না করে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাঁটাই করছেন যাতে করে সরকার ও শ্রমিকদের পাওনা দিতে না হয়।
টেলিকম কর্মীদের এক আইনজীবী জাফরুল হাসান শরিফ বলেন, এখন পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ১০৭টি মামলা আদালতে চলমান। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামের প্রতিষ্ঠানে একটি ট্রেড ইউনিয়ন সক্রিয় রয়েছে যা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধিও বটে, সেই সাথে তাদের একটি দাবিনামা আদালতে অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। এই যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধিসহ সকল কর্মীকে এভাবে একসঙ্গে টার্মিনেট করা এটা সম্পূর্ণ আইনের লঙ্ঘন। আমরা খুব শিগগিরই এই টার্মিনেশন চ্যালেঞ্জ করবো।
এ বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান বলেন, ‘আমরা শ্রম আইনের বিধান মেনেই ৯৯ জন কর্মীকে টার্মিনেট করেছি। তারা তাদের যাবতীয় পাওনাদি বুঝে পাবেন।’
/এন এইচ