প্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য

এক ইউনিটে প্রথম, অন্য দুই ইউনিটে ফেল

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষের (স্নাতক) ভর্তি পরীক্ষায় একটি ইউনিটে প্রথম হলেও অন্য দুইটি ইউনিটে ফেল করেছেন মিশকাতুল জান্নাত নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী ‘বি’ ইউনিটে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম হলেও ‘এ’ ইউনিট এবং ‘এফ’ ইউনিটে ফেল করেছেন। এমনকি ‘বি’ ইউনিটে তিনি যে নম্বর পেয়েছেন অন্য কোনও ইউনিটের কোনও শিফটে কেউ সেই পরিমাণ নম্বর পাননি। মিশকাতুল জান্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বোন হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।

শিক্ষক সমিতির তদন্ত দাবিঃ এদিকে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ এবং ঘটনার তদন্ত দাবি করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫০ জন শিক্ষক বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপর সন্ধায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জনসংযোগ বিভাগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মিশকাতুল জান্নাত এমসিকিউয়ে (বহুনির্বাচনি প্রশ্ন) ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬৭ দশমিক ২৫০ পেয়েছেন যা অন্য কোনও ইউনিটে আর কেউ পায়নি। অথচ ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় শিফটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন তিনি। একইভাবে ‘এফ’ ইউনিটেও চতুর্থ শিফটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। মিশকাতুল বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইাবাড়ী ইউনিয়নের এনামুল বারীর মেয়ে। এ বিষয়ে মিশকাতুল জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।

মিশকাতুলের বড় বোন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক বলে জানা গেছে। তিনি ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ইমরানা বারী জানান, তার ছোট বোনের ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তারা যদি খাতা পরীক্ষা করতে চায় করুক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেলা মুশতারী বলেন, ‘ইমরানা বারীর ছোট বোন এখানে পরীক্ষা দিয়েছে সেটা আমাদের তিনি লিখিতভাবে জানাননি। যখন ও (মিশকাতুল জান্নাত) পরীক্ষার জন্য আসলো, ওকে আমরা চিনতাম। ফেসবুকে ছবি দেখেছি। ওকে দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে গেছি যে, এই মেয়ে এখানে কেন? মোটেও আমরা খুশি হইনি।’

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ৫০ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেখানে তারা বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। এতে স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজী মাযহারুল আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম সুমন, সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ প্রমুখ।

তদন্ত কমিটিঃ বৃহস্পতিবার সন্ধার পর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: নুর আলম সিদ্দিককে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. সানজিদ ইসলাম খান। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

তবে এ কমিটি গঠনের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, বি ইউনিটে শুধু একজন শিক্ষার্থীর বেলায় এ ঘটনা ঘটেনি। এখানে পুরো ইউনিটের পরীক্ষার বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। কারণ ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারে। সেজন্য বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখে তদন্ত করা উচিত।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজী মাযহারুল আনোয়ার বলেছেন, ‘আমরা ৫০ জন শিক্ষক বি ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখে ঘটনার তদন্ত দাবি করে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছি।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউল

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close