দেশজুড়ে
উন্নয়নের নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নারী সমাজ
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ জোবেদা ২০১০ সালে সরকারি ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা কৃষি ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে একটি ছোট খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে তার খামারে ৭টি গাভী ও ২০টি ছাগল ১০০টি মুরগি রয়েছে। বর্তমানে তার ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করছে। লেখাপড়ার মাঝে তারা মায়ের কাজে সহযোগিতা করে। তার স্বামী প্রতিদিন সকালে ভ্যানে করে গাভীর দুধ বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় পৌঁছে দেন। এখন তাদের সংসারে এখন অভাব নেই। জোবেদার এ এগিয়ে যাওয়ার কাহিনী বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উন্নয়নের নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নারী সমাজ।
এ অবস্থায় একদিন স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয় আজাদের স্ত্রী জোবেদার। তার কাছে সংসারের সব কথা খুলে বলেন তিনি। বেসরকারি সংস্থার ঐ কর্মী সমিতি থেকে কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনের পরামর্শ দেন এবং জোবেদাকে ঋণ পেতে সাহায্য করেন।
শুরুতে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫টি ছাগল ও ১০টি মুরগি কিনে বাড়ির আঙিনায় পালন শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে দুইটি ছাগল বাচ্চা দেয়। ছাগলের বাচ্চা ও মুরগির ডিম বিক্রি করে জোবেদা ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। লেনদেন ভাল হওয়ায় ঐ সমিতি থেকে ফের তিনি ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ ঋণের টাকা দিয়ে তিনি দুটি গাভী ও আরো ৫টি ছাগল কিনেন। গাভী দুটি প্রতিদিন সাড়ে ৭ কেজি করে দুধ দেয়। গাভীর দুধ ও ডিম বিক্রি করে জোবেদার সংসারে উন্নতি হতে থাকে।
কাউসার উদ্দিন পেশায় রিকশাচালক। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাড়াবিল গ্রামে। এলাকায় রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চলে। কোনো কোনো দিন কারোই এক বেলা ভাতও জুটে না। আবার অসুস্থতার কারণে একদিন রিকশা চালালে দুইদিন বিশ্রাম নিতে হয় তাকে। এভাবেই চলছিল তিন সন্তান নিয়ে তার ৫ জনের সংসার। প্রায় প্রতিদিনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চলত ঝগড়া। কিন্তু অন্য কোনো আয়ও নেই আজাদ মিয়ার।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য দারিদ্র্য মোকাবিলা করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কমে এসেছে। এরই মধ্যে সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। এসব পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন। সরকারের বাস্তবায়িত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে দারিদ্রতা যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে তা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
আমাদের দেশের নারীদের এক বিশাল অংশ আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত। দিন দিন তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন, গাভী পালন, মৎস চাষ, হাঁস-মুরগী পালন, সবজি বাগান, মৃৎশিল্প, বসতবাড়ির আশেপাশে বৃক্ষরোপন এবং বাঁশ ও বেতভিত্তিক শিল্পপণ্য ইত্যাদি কাজের সঙ্গে নারীরা সরাসরি জড়িত। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের প্রায় ৩৪ শতাংশই নারী। শহরকেন্দ্রিক শ্রমনির্ভর শিল্পে বিশেষত পোশাকশিল্পের ৮০ শতাংশ কাজ নারীরাই করে থাকে। কাপড় সেলাই, নকশা, বাটিক, বুটিক ও এমব্রয়ডারি ইত্যাদি উপার্জনমূলক কর্মের সঙ্গে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী জড়িত।
এছাড়াও নারীরা যুক্ত আছে বিপনীকেন্দ্র, অভ্যর্থনা ডেক্স, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, শিক্ষকতা, শিল্পকলা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী মহলের বিভিন্ন পর্যায়ে। কাজেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসরত ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক অবস্থানে বিশেষ করে হাওর ও চরাঞ্চলের নারীদের উৎপাদনশীল কাজে এবং অর্থনৈতিক মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে নারীরা অর্থনৈতিক সুযোগ কাজে লাগিয়ে আয়বর্ধক কাজে উৎসাহী হচ্ছেন। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও সম্পদের সমান অধিকারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সব শ্রেণি বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। মৌলিক, সামাজিক, শিক্ষাগত এবং চিকিৎসাসেবা যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই পায় সেজন্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। মাত্র ১০ টাকার মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র কৃষক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন। সরকারি ব্যাংক থেকে আর্থিক ঋণ সহায়তার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা এখন নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন।
/এন এইচ