আশুলিয়াকৃষিপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
উজান ঢলে আধাপাকা অবস্থাতেই ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন ধান চাষীরা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ উজান ঢলে সাভারের প্রায় ২৫০ হেক্টর জমির ধান ক্ষেতে পানি উঠেছে। উঁচু জমিতে গাছের গোড়ায় থাকলেও নিচু জমির ধান ক্ষেতে পানি প্রায় গাছের সমান। আরও ১৫-২০ দিন পর চলতি মৌসুমের ধান কাটার কথা থাকলেও হঠাৎ সৃষ্ট এ পানির ঢলে আগেই ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন সাভার উপজেলার ধান চাষীরা।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ) সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার ধানের ক্ষেতে সরেজমিনে গিয়ে পানি বৃদ্ধির চিত্র চোখে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রে জানা যায়, সাভারের আশেপাশের তিনটি নদী তুরাগ, বংশী ও ধলেশ্বরীর পানি বিপদ সীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এ তিনটি নদীর পানি গত এক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে।
জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল বংশী নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১.২৭ মিটার, ধীরে ধীরে সেই পানি বেড়ে ১৯ এপ্রিলে হয়েছে ১.৮৬ মিটার, ১২ এপ্রিল তুরাগ নদে পানির উচ্চতা চিল ০.৮৫ মিটার, সেই পানি ১৯ এপ্রিল ছিল ১.৫৫ মিটার, ধলেশ্বরী নদীতে ১২ এপ্রিল ছিল ১.২৪ মিটার আর ১৯ এপ্রিল দাড়িয়েছে ১.৫০ মিটারে।
আশুলিয়ার বাইপাইলের শান্তিনগর এলাকার বর্গা ধান চাষী আব্দুল আজিজ বলেন, আমি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বোরো-২৮ ধান চাষ করেছিলাম। ধান কাটার কথা ঈদের পরে মানে আরও ১৫-২০ দিন পরে। ধান মাত্র হলুদ হওয়া শুরু করেছে। আর কয়টা দিন সময় পেলেই ধান পুরোপুরি পেকে যেত। এখন যেভাবে পানি এসেছে দুই একদিনের মাঝেই ধান কেটে নিতে হবে। নাহলে আরও ক্ষতি হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমার জমিতে অর্ধেক ধানও হবেনা ঠিকমত। এই অবস্থায় হয়ত টেনেটুনে ৫০ থেকে ৬০ মন ধান পাবো। এই পরিমাণে ধান পেলে তো খরচই উঠবেনা। এখন বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধানই কাটতে হবে।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, এই পরিস্থিতিতে সাভারের প্রায় ২০০ কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ হেক্টর জমির ধান এখন হুমকিতে। গত ৫ থেকে ৬ বছরে এই সময়ে পানি বাড়েনি। কিন্তু এই বছর হঠাৎ করেই উজান ঢল এসেছে। সাভারের আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, আশুলিয়া, ধামসোনা ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের কিছু অংশে পানি বেড়েছে।
এই সময়ে বোরো জাতের ২৮, ২৯, ৭২ সহ বেশ কিছু জাতের ধান চাষ করেন কৃষকেরা। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় আজকে পানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এই সময়ে পানি বাড়লে ধান যদি পাকে তাহলে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ঢাকা পওর বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোতে পানির চাপ বেশি। যার কারণে ওখান থেকে যখন পানিটা নিচের দিকে নামতেছে, মেঘনাতেও পানির চাপ বেশি। এই কারণে পদ্মা নদীর এদিকে যেই নদীগুলো আছে সেগুলো থেকে পশ্চিম পাশের নদীগুলোতে পানি নিষ্কাশন হতে সময় বেশি লাগছে। কিন্তু এদিকের (সাভার) পানিতে এরকম চাপ নেই, বন্যাজনিত সিচুয়েশন এখনো তৈরি হয়নাই। সাভারে পানির লেভেল একেবারে স্বাভাবিক। এই সময়ে পানি যেই লেভেলে থাকার কথা সেই লেভেলেই আছে। তুরাগ, ধলেশ্বরী, বংশী তিনটি নদীর পানিই স্বাভাবিক।
ঢাকা অর্থনীতি/এন এইচ