প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
উইন্ডমিলের কাজ কী? বিদ্যুৎের যুগান্তকারী আবিষ্কার(ভিডিও)
(নাহিদ হাসান শুভ): উইন্ডমিল বা বায়ুকল। আমরা বিভিন্ন সময় হলিউড মুভি কিংবা ড্রামাতে উইন্ডমিল দেখে থাকি। ফাঁকা মাঠের মধ্যে কিংবা সমুদ্রপাড়ে, বাড়ির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উঁচু স্তম্ভের সাথে বড় বড় পাখা ঘুরছে। দেখতে কি অসাধারণই না লাগে! এগুলো দেখতে যেমন কৌতূহলপূর্ণ, তেমনি এর কাজও বেশ চমকপ্রদ। কিন্তু উইন্ডমিলের কাজ এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। তো চলুন, আজ উইন্ডমিল নিয়ে আলোচনা করা যাক।-
মূলত পাহাড়ি এলাকা, কিংবা সমুদ্রপাড়ে সবচেয়ে বেশি উইন্ডমিল দেখা যায়। কারণ ঐ সমস্ত এলাকায় তুলনামূলকভাবে বায়ু প্রবাহের পরিমাণ বেশি থাকে। উইন্ডমিল পরিচালনার প্রথম শর্ত হলো, তীব্র বায়ুপ্রবাহ থাকতে হবে। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় যে, সব উইন্ডমিলে সমানসংখ্যক পাখা বসানো হয় না। তবে পাখা সরু হলে একটি সুবিধা পাওয়া যায়। ওজন কম থাকার কারণে নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই নির্ধারণ করা হয়, কী ধরনের পাখা ব্যবহার করা হবে।
উইন্ডমিলের প্রথম আবিষ্কার ঘটে ইসলামী স্বর্ণালী যুগে। সে সময় আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজের পরিসরকে সহজ করে আনার দরকার ছিল। তারপর শুরু হয়ে যায় চিন্তা-ভাবনা। মুসলমানদের হাত ধরেই বিশ্বে সর্বপ্রথম উইন্ডমিলের আবিষ্কার ঘটে। পৃথিবীর প্রথম উইন্ডমিলটি ঘুরেছিল নবম শতাব্দীতে পূর্ব পারস্যে। ধারণা করা হয়, এরও আগে সিস্তানে ৬৪৪ সালে বায়ুকল আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে ৯১৫ সালের পারস্যের আবিষ্কৃত উইন্ডমিলকেই পৃথিবীর প্রথম উইন্ডমিল বলে বিবেচনা করা হয়। তখন অবশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উইন্ডমিল ব্যবহার হতো না।
বিশ্বের প্রথম ভাসমান উইন্ডমিল আবিষ্কৃত হয় স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ডের সমুদ্র উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার সাগরে ভাসমান স্তম্ভের উপর উইন্ডমিলগুলো নির্মাণ করা হয়, যাতে করে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২০ জন বাসিন্দাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবার আওতায় নিয়ে আসা যায়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উইন্ডমিল রয়েছে নেদারল্যান্ডে। শুধু তা-ই নয়, উইন্ডমিলকে নেদারল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রাচীন অনেক উইন্ডমিল এখনও নেদারল্যান্ডে রয়েছে। এমনকি নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট কর্তৃক নির্মিত অনেক উইন্ডমিল বর্তমানে দৃশ্যমান রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত উইন্ডমিল হলো কিন্ডারডিজক উইন্ডমিল। একাধারে সাজানো এই ১৯টি উইন্ডমিল ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়েছে। নেদারল্যান্ডের সেই পুরাতন উইন্ডমিলগুলোতে এখনো গম ভাঙা, শস্য গুঁড়া করা এবং সেঁচকাজ পরিচালনার মতো কাজগুলো করা হয়ে থাকে। এছাড়া নেদারল্যান্ডে রয়েছে উইন্ডমিল পার্ক ও সংরক্ষিত উইন্ডমিল অঞ্চল।
১৮৫০ সালের দিকে পুরো নেদারল্যান্ড জুড়ে প্রায় ১০ হাজার উইন্ডমিল নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরনো নেদারল্যান্ড জুড়ে এখনও প্রায় ১ হাজার উইন্ডমিল রয়েছে। এগুলো যেমন পর্যটক আকৃষ্ট করছে, দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জন করছে তেমনি প্রায় সবগুলোতেই এখনও কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শত বছর পার হয়ে গেলেও এখনও এগুলো নতুনের মতোই দেখায়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডে উইন্ডমিলকেন্দ্রিক পর্যটনও গড়ে উঠছে। দৃষ্টিনন্দন এই উইন্ডমিলগুলো নিয়ে বিশ্ববাসীর কৌতূহল যেন কমছেই না। তাই তো প্রতি বছর উইন্ডমিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডে।
ভিডিও দেখুনঃ
/এন এইচ