কৃষিপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনশিল্প-বানিজ্য
ঈদ ঘিরে সাভারে মেহেদী চাষীদের ব্যস্ততা
বিশেষ প্রতিবেদক: ঈদ তো এসেই গেলো। কেনা কাটা শেষ হলেও, বাকী শুধু হাত রাঙ্গানোর মেহেদীর আলপনা। ঈদ ঘিরে বাহারি নকশায় হাত সাজাতে তরুণীদের মাঝে তারই শুধু ব্যস্তততা। পাশাপাশি ছেলেরাসহ নানা বয়সির মানুষও ঈদে মেহেদী পড়তে দেখা যায়। তবে সহজলাভ্যতা ও ঝামেলে এড়াতে বিগত কয়েক বছর ধরে টিউব মেহেদীই অনেকটা বজার দখল করে রেখেছে। তবে প্রকৃতির গাছের মেহেদীর কদর কিন্তু কমেনি। শধু তাই নয়, দেশের কয়েক জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ছাষ হচ্ছে মেহেদী পাতার।
আর প্রকৃতির এমন মেহেদী চাষ করে স্বাবলম্বী সাভারের অনেক চাষী। আর বছরের এই সময়টায় বাড়তি মুনাফার ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় তাদের। বিশেষ করে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী, বাহেরচর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বিস্তির্ন এলাকা জুড়ে মেহেদী চাষ করা হয়। এখন থেকে পাইকারদের হাত ধরে মেহেদী পাতা রাজধানীর কাওরান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পৌছে যায়। এক আটির দরদাম প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। তবে ঈদ বাজারে একটু বাড়তি হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাভারে প্রায় ১৬ হেক্টর জমি মেহেদী পাতা চাষাাদ হচ্ছে। এই কৃষিকে পুঁজি করে জীবিকার মাধ্যমে প্রায় ৫০টি পরিবার সাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। এ চাষ প্রক্রিয়া খুবই সামান্য খরচেই করা যায়। একবার রোপন করা গাছ থেকে একাধিকবার ডগা কেটে রোপণ করে মেহেদী উৎপাদন করা যায়। একটি মেহেদী গাছ থেকে বছরে পাঁচবার ডালসহ পাতা পাওয়া যায়।
সরজমিনে দেখা যায়, চাষীরা ঈদ ঘিরে মেহেদী পাতার ডাল কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ পরিচযা নিয়েও কাজ করছেন। অনেকোটা চায়ের বাগানে আদলে মেহেদী বাগান। খাটো গাছের সবুজ পাতায় বিসৃন্ত বাগান। সারি সারি গাছের মাঝখানে হাঁটা ও কাজ করার জন্য নরু পথ।
মেহেদী চাষী আব্দুল জলিল জানালেন, “বাজারে প্রক্রিয়াকৃত মেহেদীর তুলনায় চাষ করা মেহেদির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারী বিক্রেতারা এসে মেহেদী কিনে নিয়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ মৌসুমে মেহেদীর চাহিদা অনেক বেশি থাকে।”
রাজধানী থেকে মেহেদী পাতা কিনতে আসা এমদাদ হোসনে জানান, ঈদ হাতে মেহেদী পড়া ছাড়াও, চুল ও দাড়িতে ব্যবহারের জন্য এই প্রাকৃতিক পাতার বেশ কদর রয়েছে। তাই সরাসির চলে আসলাম। তাছাড়া এমন বাগান কখনো দেখিনি।দেখাও হয়ে গেল।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মনোয়ারা আক্তার মনি জানান, হাতে বাহারি নকশা তৈরিতে মেহেদির কোন জুড়ি নেই। বাজারের কেনা মেহেদি অনেকটা ভেজাল থাকে। তবে চাষ করা মেহেদি অনেকটা গুণগত। তাই এ চাষ করা মেহেদি আমাদের পছন্দের তালিকায় থাকে।
সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ জানান, “মেহেদী চাষে অল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষাবাদ কৌশল, কখন, কিভাবে চাষ করা যায় এসব তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে। জমি তৈরি কৌশল, সার প্রয়োগের নিয়মাবলী ইত্যাদি তথ্য কৃষকদের দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সরকারি কোন নিয়ম না থাকায় মেহেদি চাষীদের কোন ধরনের ঋণ কার্যক্রম সহায়তা দেওয়া হয় না।”
মূলত, পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে মিশরীয়রা চুলের সৌর্ন্দয্য রক্ষায় মেহেদি ব্যবহার করত। পরে ধীরে ধীরে হাতে বাহারী নকশায় সাঁজাতে মেহেদীর প্রচলনের দখা মেলে।