প্রধান শিরোনামরাজস্ব

ঈদ উপলক্ষে ২৪ দিনেই ১৩৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রোজা এবং ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। মে মাসের ২৪ দিনেই ১৩৫ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স এসেছে। চলতি মাসের বাকি কয়েক দিন ঈদ সামনে রেখে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ এমনিতেই ভালো ছিল। রোজা এবং ঈদ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে প্রবাসীরা বেশি করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে। অর্থবছর শেষে এবার রেমিটেন্সের পরিমাণ এক হাজার ৬০০ কোটি (১৬ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের ২৪ দিনে (১ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত) ১৩৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এরমধ্যে ১ থেকে ৩ মে এসেছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। আর ৪ থেকে ১০ মে ৪৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ১১ থেকে ১৭ মে ৩৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার এবং ১৮ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৯৩ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, বেসরকারি ৪০টি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০১ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, আশা করা হচ্ছে একক মাস হিসেবে মে মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে আসবে। এর আগে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল জানুয়ারি মাসে, ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, মে মাসে তার চেয়েও বেশি রেমিটেন্স আসবে।

এর আগে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এক হাজার ৩৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার) রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা- যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। মে মাসের ২৪ দিনে ১৩৫ কোটি ডলার যোগ করলে চলতি অর্থবছরে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৪৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। অর্থবছরের বাকি ১ মাস ৬ দিনে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স আসবে। সে হিসাবেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এবার রেমিটেন্স ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা- যা ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।

৭ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১২৪ কোটি ১০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে মূলত রেমিটেন্স বৃদ্ধির কারণে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। স্থানীয় বাজারে ডলারের উচ্চমূল্য এবং হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। আগের বছর একই দিন ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close