তথ্যপ্রযুক্তি

ইউটিউবার হতে চাইলে যেসকল জিনিস প্রয়োজন!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম ইউটিউব। ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি করে আপনি যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তেমনই আয় করতে পারেন। তবে ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে ধৈর্য্য ও মনোবল নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি ইউটিউবার হতে চান তাহলে কিছু বিষয় আগেই জেনে রাখা উচিত।

ইউটিউবারের যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন

ইউটিউব চ্যানেলকে সফল করতে ভালো মানের ভিডিও আপলোড করতে হবে। ভালো মানের ভিডিও তৈরি করতে কিছু যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে। কিন্তু দুশ্চিন্তা করবেন না, ভিডিও তৈরির কাজ শুরু করতে আপনাকে খুব বেশি খরচ করতে হবে না। এখানে একজন ইউটিউবারের যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলো।

* ক্যামেরা : শুরুতেই আপনাকে ডিএসএলআর অথবা মিররলেস ক্যামেরা কিনতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও তৈরি শুরু করতে ভালো মানের ওয়েবক্যামই যথেষ্ট। অথবা আপনার স্মার্টফোনও ব্যবহার করতে পারেন। বছরখানেক পর ইউটিউব থেকে কিছু আয় করতে পারলে আরো উন্নতমানের ক্যামেরা কেনার কথা ভাবতে পারেন।

* ট্রাইপড : আপনার ক্যামেরা অথবা স্মার্টফোনকে ধরে রাখা ও স্থির রাখার জন্য একটি ট্রাইপড (ক্যামেরার স্ট্যান্ড) প্রয়োজন হবে।

* মাইক্রোফোন : ক্যামেরার সঙ্গে যে বিল্ট-ইন মাইক্রোফোন থাকে তা সুবিধাজনক নয়। একটি আলাদা মাইক্রোফোন কিনুন ও পৃথকভাবে অডিও রেকর্ড করুন। অডিওটি পরে ভিডিওটির সঙ্গে জুড়ে দিন। আপনার কন্টেন্টের ধরনের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত মাইক্রোফোন কিনতে কনডেনসার মাইক্রোফোন ও ডাইনামিক মাইক্রোফোন সম্পর্কে জেনে নিন।

* গ্রিন স্ক্রিন : আপনার ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে একটি গ্রিন স্ক্রিনের প্রয়োজন রয়েছে। একটি গ্রিন স্ক্রিন কিট কিনতে ৫০ ডলারের বেশি খরচ হতে পারে। কিন্তু প্রথম প্রথম আপনি সাধারণ কোনো সবুজ কাপড় দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।

* স্ক্রিন ক্যাপচার সফটওয়্যার : আপনার ভিডিওর সঙ্গে স্ক্রিন ক্যাপচারের সম্পর্ক থাকলে স্ক্রিন ক্যাপচার সফটওয়্যার প্রয়োজন হবে, যেমন- এক্সেল ভিডিও টিউটোরিয়ালস অথবা পিসি গেমপ্লে। একটি বিনামূল্যের স্ক্রিন ক্যাপচার সফটওয়্যার হলো ওবিএস স্টুডিও- এটি এমপি৪ ভিডিও ফাইল হিসেবে স্ক্রিন রেকর্ড করতে পারে।

ইউটিউব চ্যানেলের প্রচার কিভাবে করবেন?

ইউটিউবে চ্যানেল খুলে প্রতিদিন নতুন নতুন ভিডিও আপলোড করলেই আপনি কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না, আপনার সৃষ্টিকর্মকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচার করতে হবে। প্রচার না করলে বছরের পর বছর চলে গেলেও আপনি ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। আপনার চ্যানেলকে জনপ্রিয় করতে নিয়মিত ভিডিও আপলোডের পাশাপাশি প্রচারও করতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে প্রচারেই প্রসারে। কিন্তু কিভাবে প্রচার করবেন? এখানে এ সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়া হলো।

* সোশ্যাল মিডিয়া : আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে? তাহলে আপনার জন্য সুখবর। আপনার ভিডিওর লিংক ফেসবুকে শেয়ার করলে বন্ধুদের কাছে আপনার সৃষ্টিকর্ম পৌঁছবে। অ্যাকাউন্ট না থাকলে তৈরি করে নিন ও ফেসবুক বন্ধুর তালিকা লম্বা করুন। একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ৫,০০০ পর্যন্ত বন্ধু বানানো যায়। এছাড়া অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার চালাতে পারেন।

* ফোরাম : ভিডিও শেয়ারের জন্য অন্যতম চমৎকার মাধ্যম হলো ফোরাম, বিশেষ করে রেডিটের মতো বড় ফোরাম। এমন কমিউনিটি খুঁজুন যা আপনার কন্টেন্টের জন্য প্রাসঙ্গিক, তারপর সবচেয়ে ভালো ভিডিওটি শেয়ার করুন। কিন্তু অতি ঘনঘন শেয়ার করবেন না, কারণ স্প্যামিংয়ের জন্য ব্যান হতে পারেন।

* অন্যের সঙ্গে কাজ করুন : অন্যের সঙ্গে কাজ করলে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়। নেটওয়ার্ক বড় হলে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও ভিউয়ের সংখ্যা বাড়বে, এর ফলে সাবস্ক্রাইবারও বাড়তে থাকবে- কারণ ভিডিও দেখে ভালো লাগলে বা উপকৃত হলে লোকজন আপনার চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করবে। অন্য ইউটিউবারের অডিয়েন্স দ্বারা আপনার ভিডিওগুলো এক্সপোজের জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। অন্যের সঙ্গে কাজ করলে আপনারও উপকার হবে, যার সঙ্গে কাজ করবেন তারও উপকার হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে প্রমোশন হলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আপনার চ্যানেলকে জনপ্রিয় করতে অনেকগুলো মাস অথবা কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। ইউটিউবে সফল হতে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই।

ইউটিউব থেকে আয়

অনেকের ধারণা ইউটিউব থেকে আয় করা খুব সহজ, কিন্তু বিষয়টি আসলে তা নয়। ইউটিউব থেকে আয় করতেও আপনাকে ধৈর্য্য ধরে পরিশ্রম করে যেতে হবে। আপনি ভিডিও তৈরি থেকে শুরু করে প্রচারকার্য ঠিকঠাক চালাতে পারলে একটা সময় ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন। আপনার ভিডিও যত বেশি ভিউ হবে, আয় তত বাড়তে থাকবে। ২০১৬ সালে ইউটিউবে প্রতি ১,০০০ ভিউয়ের জন্য ইউটিউবারদের গড় আয় ছিল ১.৫০ ডলার। সেই হিসেবে আপনার ভিডিও ১মিলিয়ন ভিউ হলে পকেটে ১,৫০০ ডলার পর্যন্ত আসতে পারে। ইউটিউবারদের অভিযোগ হলো, ২০১৭ সালে গড় আয় আরো কমেছে। সারকথা হলো, ইউটিউব চ্যানেল খুলেই রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না, এমনকি আপনার চ্যানেলটি জনপ্রিয় হলেও। তাহলে শীর্ষ ইউটিউবাররা কিভাবে আয় করে? তারা বিভিন্ন মনিটাইজেশন মেথডের মাধ্যমে অর্থোপার্জন করেন, যেমন-

* অ্যাফিলিয়েট সেলস ও প্রোডাক্ট প্রমোশন

* কনসালটেন্ট সার্ভিস

* সরাসরি বিজ্ঞাপন (অ্যাডসেন্স নয়)

* পাবলিক স্পিকিং ইভেন্ট

* ফ্যানস থেকে ডোনেশন।

অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

একজন ইউটিউবার হিসেবে নিজের প্রতি আস্থা ধরে রাখতে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। আপনার প্রথম ভিডিওর কাজ শুরু করার পূর্ব থেকেই অর্জনযোগ্য লক্ষ্য ঠিক করুন, যা আপনি করতে চান। এসবকিছু আপনাকে নিজের কাজে ফোকাস করতে ও উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য প্ররোচিত করবে। অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করলে সহজে মনোবল হারায় না। একটি কার্যকর লক্ষ্যে তিনটি মূল উপাদান থাকে: সংখ্যা, সময় ও নিয়ন্ত্রণ।

* সংখ্যা : একটা নির্দিষ্ট সময়ে কতটি ভিডিও তৈরি করবেন, যেমন- ৩০ দিনে ১০টি ভিডিও তৈরি করা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে আপনার পক্ষে যতগুলো ভিডিও বানানো সম্ভব ততটি ভিডিও বানানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

* সময় : আপনার ভিডিওগুলো কতদিনের মধ্যে তৈরি করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে, যেমন- ৩০ দিনে ১০টি ভিডিও তৈরি করা। এমনভাবে সময় নির্ধারণ করুন যেন নির্ধারিত সময়েই ভিডিওগুলো তৈরি করা যায়। যদি মনে করেন যে ৩০ দিনে ১০টি ভিডিও বানাতে পারবেন না, তাহলে ভিডিওর সংখ্যা কমিয়ে ফেলুন।

* নিয়ন্ত্রণ : এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যেটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কাজকে লক্ষ্য বানান, ফলাফলকে নয়। আপনি প্রতি তিন দিনে একটি ভিডিও তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন, কিন্তু ভিডিওটি কতজনে দেখবে সেটি নয়। ঠিক তেমনি আপনি এ মাসে কত আয় করবেন তা লক্ষ্য হতে পারে না, কিন্তু এটা আপনার লক্ষ্য হতে পারে যে স্পন্সর খুঁজে আলোচনার মাধ্যমে কিছু আয়ের চেষ্টা করা।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close