দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে আহতদের দেখতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি সবার সঙ্গে দেখা করেননি অভিযোগ তুলে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে তাঁর পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা।
হাত, পা ও চোখে ব্যান্ডেজসহ এই ব্যক্তিরা হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাদের সবার সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না। এছাড়া ঘোষণার পরেও এখনো আহতদের এক লাখ টাকা করে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নিতে আজ বেলা ১২টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তিনি আহত কয়েকজনের খোঁজ–খবর নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ততক্ষণে সেখানে আহত ব্যক্তিরা ভিড় করেন। তাঁদের সরে যেতে বললে আহত ব্যক্তিরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে পথ আটকে দাঁড়ান। কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। এদের মধ্যে দু-একজনকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপরে উঠতে দেখা যায়। তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অন্য একটি গাড়িতে চড়ে চলে যান। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে হাসপাতালে আসা যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। পরে তিনিও অন্য একটি গাড়িতে হাসপাতাল থেকে চলে যান।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য নিরাপদে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। তাঁর গাড়িটি অক্ষত আছে।
পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে আহত ৮৪ জন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চিকিৎসাধীন এই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরাও সেখানে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে সেনা সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। তখন আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হুইল চেয়ারে বসে আহত মো. মাসুম বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এসে তাদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের চতুর্থ তলায় গেলেও তাদের দেখতে তিনতলায় যাননি। তিন মাস পর হাসপাতালে এলেও তিনি তাঁদের উপেক্ষা করেছেন।
মো. মাসুম বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশির ভাগই তা হাতে পাননি।’
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আল মিরাজ নামের এক ছাত্র জানান, তার ডান চোখের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে তার চিকিৎসা নেই। তাই তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান। মিরাজ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের খোঁজ নিতে এলেও তিনি আজ চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চোখে পাওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে যাননি।
বিকেলে সোয়া ৫টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান করছিলেন।