প্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন
আশুলিয়া থানা; নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের, তারাই অনিরাপদ
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: ব্যারাকের এই বিছানাই ভরসা আশুলিয়া থানার পুলিশ সদস্য নজরুল ইসলামের। তাও আবার জায়গার অভাবে ৪০ টি ছোট বিছানায় পালা করে ৮০ জনের বসবাস। দিনের বেলাতেও আধাঁরে ডুবে থাকে পুলিশ ব্যারাক। রোদে টিনের চালের উত্তপ্ত গরম, বৃষ্টিতে ভিজে বিছানা। সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসের আতঙ্ক। ক্লান্ত চোখেও র্নিঘুম কাটে রাত। নজরুল ইসলামের একার নয়, আশুলিয়া থানার প্রায় ৮০ জন পুলিশ কনস্টেবলদের এই করুণ দশা।
শুধু যে বিছানা সংকট তাই নয়। আলো বাতাস ঢুকতে না পারলেও বৃষ্টির পানি ঠিকই ঢুকে পড়ে এই ব্যারাকে। একদিকে বাতাস ঢোকার পথ না থাকায় তীব্র গরম, অন্যদিকে আলোর অভাবে লাইট জালিয়ে রাখা বাড়িয়ে দেয় গরমের উত্তাপকে। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আছে স্যাতস্যাতে পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর টয়লেট এবং বৃষ্টির পানি। টিনের চাল হওয়াতে তিন তলার ব্যারাকটিকে গ্রীষ্মের দুপুরে নরক বললেও ভুল হবে না। আবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ চার পুলিশ পরিদর্শকের বসার জায়গা হলেও, বাকী এসআই বা এএসআই কাররোই বসার ব্যবস্থা নেই।
আর এভাবেই ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে আশুলিয়া থানার কার্যক্রম। দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও ঢাকা জেলার সাভার থানাকে ভাগ করে আশুলিয়ার বাইপাইলে অবস্থিত এই থানায় কোন ধরণের পরিকল্পনা ছাড়াই বানানো হয়েছে পুলিশ ব্যারাক। ভিত্তি ছাড়াই নির্মিত এক তলা ভবনকে প্রথমে দুতলা করা হলেও পরে বাড়ানো হয়েছে টিনশেডের আরেকটি ফ্লোর। যা এখন আশুলিয়া থানার পুলিশ ব্যারাক। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর বিশ্রাম নেয়ার জন্য এমন অব্যবস্থাপনা মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছেন আশুলিয়ার পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশ সদস্যরা যেখানে নিজেরাই অনিরাপদ। একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসের আতঙ্ক, অন্যদিকে একজনের বিছানায় থাকছেন আরেকজন। এমন ভয়াবহ চিত্র নিয়ে দিনপার করছেন আশুলিয়ার থানার শতাধিক পুলিশ সদস্য। লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না ভবন মালিক।
একটু নিশ্চিন্তে কি থাকার ব্যবস্থা করা যায় না? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তুলে ধরেন বেঁচে থাকার করুণ চিত্র তুলে ধরেন অনেকে পুলিশ সদস্য।
২০০৫ সালে বাইপাইলের এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে চলছে আশুলিয়া থানা। পিলার ছাড়া একতলা ভবনের ওপর দোতলা। আবার তার ওপরই টিনের চালা দিয়ে তৈরি হয় কনস্টেবলদের ব্যারাক। ৮ বছর আগেই লিখিত ভাবে জানিয়েছে ভবন মালিক। বাইরে একটু রংয়ের ছোঁয়া থাকলেও ভিতরে জরাজর্ণী ভবন, দেয়াল খসে পড়ছে ও দেখা দিয়েছে ফাঁটল। দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় তারা।
আশুলিয়া থানার পুলিশ সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, এক সময় এ বিছনায় তো অন্য সময় আরেক বিছানায় ঘুমাতে হয়। আমাদের থাকার পরিবেশ খুবই খারাপ। ডিউটি করে এসে থাকা যায় না।
আশুলিয়া থানার পুলিশ সদস্য মাহামুদুল জানান, পরিবার ছেড়ে দেশের প্রয়োজনে আমরা ঝাপিয়ে পড়ি। তাই আমাদের থাকা-খাওয়া ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন আরও একটু নজর দেন এমনটাই প্রত্যাশা।
আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, একতলা ভবনে শুরু হলেও, পরে তিন তলা করা হয়েছে। যা অতন্ত্য ঝুঁকিপূর্ণ। যারা আমাদের নিরাপত্তা দেন, তারা নিজেরাই ঝুঁকির মধ্যে আছেন। উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, যেন তারা দ্রুত থানার ভবন স্থানান্তর বা সংষ্কার করে নতুন ভবন তৈরি করে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান জানান, সস্প্রতি আশুলিয়ার মরাগাঙ্গ এলাকায় আশুলিয়া থানার জন্য জায়গা নেয়া হয়েছে। এছাড়া আশুলিয়া থানায় কিছু সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি যে, বর্তমান ভববনটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবো বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
এদিকে পরিদর্শনে এসে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছেড়ে দ্রুত অন্য ভবনে স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। এসময় তিনি আরও বলেন, স্থায়ী ভাবে ভবন সরিয়ে নেয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই যতদিন না স্থায়ী ভবনে স্থানান্তর হচ্ছে, তার আগে দ্রুত অন্য ভবন ভাড়া নিয়ে থানা সরিয়ে নেয়ার জন্য আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন।