আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
আশুলিয়ায় `মাদক সম্রাট’ ইশতিয়াক দম্পতির সম্পদের পাহাড়, দুদকের দুই মামলা
রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও তার স্ত্রী পাখির আশুলিয়ায় অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরবর্তীতে দুদকে সম্পদবিবরণী দাখিল না করা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুইটি আলাদা মামলা করেছে দুদক। এরআগে ইতিমধ্যে ইশতিয়াকের একটি ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে সংস্থাটি।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুদকের সহকারী পরিচালক সাইদুজ্জামান বাদি হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন। মামলায় ইশতিয়াক ও পাখির স্থায়ী ঠিকানা আশুলিয়া মধ্যপাড়ার দরগাপাড় গাজীরচটের আরফিন ভিলা উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জেনেভা ক্যাম্পের ইসতিয়াক আহমেদ। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করেন তিনি। তবে জেনেভা ক্যাম্প ছাড়িয়ে গাবতলী, আমিনবাজার, সাভার এলাকায় তার ব্যবসার ব্যাপ্তি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে ইশতিয়াক সাভার আশুলিয়ায় নাম পরিবর্তন করে কামরুল ইসলাম নামে পরিচিত।
দুদক তার প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুজনের নামে আশুলিয়ার বাইপাইলে একটি ৬ তলা বাড়ি, বিলমালিয়ায় একটি ১তলা বাড়ি, আশুলিয়ায় দিয়াখালীতে একটি ৭ তলা বাড়ির সন্ধান পেয়েছে। এছাড়া একটি ব্যাংক হিসেবে ৫৫ লাখ টাকা রয়েছে। তাদের বিপুল সম্পদের খুবই ছোট একটি অংশ বলে ধারণা করছে দুদক।
এর আগে গত ২৩ জুলাই নোটিশ পাঠানো হয়েছে আশুলিয়ার আরফিন ভিলা নামে একটি বাড়িতে। ইশতিয়াক ও তার স্ত্রী পাখিকে বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে ওই বাড়িতে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
১ম মামলার আসামি মোঃ ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ মোতাবেক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সম্পদ বিবরণি নোটিশ জারি করা হলেও তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল না করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাছাড়া তিনি জ্ঞাত আয় উৎস বর্হিভূত অবৈধ অর্থের দ্বারা নিজ নামে শুধু জমি ক্রয় বাবদ ২৭,০০,৪০০/- টাকা, বাইপাইল মৌজার ৪ শতাংশ ভূমি ও তার উপর ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন ও জমির অর্ধেক, ৪.৭০ শতাংশ ভুমির ওপর নির্মিত ১তলা বিশিষ্ট ১টি বিল্ডিং, ৮.২৮৩ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ৭ তলা বিশিষ্ট ১টি ভবন (যার অর্ধেক অংশ) অর্জন করে তা দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
২য় মামলার আসামি মিসেস পাখির বিরুদ্ধে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ মোতাবেক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হলে তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল না করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাছাড়া আসামি জ্ঞাত আয় উৎস বর্হিভূত অবৈধ অর্থের দ্বারা নিজ নামে জমি ক্রয়, ব্যাংক স্থিতি বাবদ ২৮,০১,৯৬৪/- টাকা, বাইপাইল মৌজার ৪ শতাংশ ভূমি ও তার উপর ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন ও জমির অর্ধেক, দিয়াখালী মৌজার ৮.২৮৩ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ৭ তলা বিশিষ্ট ১টি ভবন (যার অর্ধেক অংশ) অর্জন করে তা দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুজনের বিরুদ্ধেই দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ইশতিয়াকের জম্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে। ছোটোবেলায় টোকাই হিসেবে পরিচিতি ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসার সঙ্গে। এরপর থেকেই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তার। মাদকের বাজারে নিজেকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যান, পরিচিত হন মাদক সম্রাট হিসেবে।
/আরএম