আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
আশুলিয়ায় ধর্ষণচেষ্টা মামলায় অপরাধী সিরাজ, আসামি মহসিন !
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশুলিয়ায় শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় যে অপরাধী তার নাম উল্লেখ না করে নিরপরাধ এক ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছে। এতে অভিযোগ উঠেছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার দায়-দায়িত্ব নিয়ে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) মামলার এজাহার ও নথি ঘেঁটে দেখা যায়, গত ১ আগস্ট আশুলিয়ার ঘোষবাগে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিশুর মা। মামলায় আসামির নাম মহসিন (৫৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম ঘোষবাগ (ভুইয়াপাড়া), থানা-আশুলিয়া, জেলা-ঢাকা।
তবে আসামির নাম মহসিন হলেও এই ব্যক্তি অপরাধী নন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী। প্রকৃত অপরাধীর নাম সিরাজ। তবে অপরাধী সিরাজের বাড়ির পাশে ভুইয়াপাড়াতেই মহসিনের বাড়ি।
মামলার বাদী বলেন, ‘আমি স্থানীয় কয়েকজনের কাছে প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তি নাম জানতে চাইলে তার নাম মহসিন বলে জানায়। ফলে সে নামেই অভিযোগ করেছি। পরে শুনলাম যে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বা অপরাধী তার নাম শফিকুল ইসলাম সিরাজ। আমি তো ভাড়াটিয়া। আমাকে যে নাম বলেছে স্থানীয়রা আমি সে নামেই অভিযোগ দায়ের করেছি। ’
‘অভিযোগের খবর পেয়ে পুলিশ তো তদন্ত গিয়েছিল। পুলিশ তো প্রকৃত আসামির নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন। তার পর মামলা নিয়েছেন। পুলিশ তাহলে কী তদন্ত করলেন?’ এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, আসামি গ্রেপ্তার হলে তার স্বীকারোক্তি নিয়ে নাম সংশোধন করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি বলে আমাকে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলাসহ ধর্ষণের হুমকি দিয়ে চলেছে। আমি খুব ভয়ে আছে। চিন্তা করছি বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যাব। এখানে আমি ও আমার মেয়ে নিরাপদ নই। কোনো ধরনের সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ’
ভুক্তভোগী মহসিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকি। এলাকায় কম যাই। আশুলিয়ার ঘোষবাগে বাড়ির পাশে আমারই এক আত্মীয় সম্পর্কে ফুফা হয়। তার নাম সিরাজ। শুনেছি সে এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু মামলা বা অভিযোগে আমার নাম ও ভুইয়াবাড়ি দিছে। পরিচিত অনেকে ফোন দিছে। খুবই হয়রানির মধ্যে পড়েছি। পরে বাদীর কাছে লোক পাঠাইছি। বাদী বলেছে, তিনি আসামিকে চেনেন, নাম জানেন না। ভুলে নাম উঠছে। আমি বাদীকে বলছি, পুলিশের কাছে দরখাস্ত করে নাম বদলানোর জন্য। বাদী বলেছে দরখাস্ত দিয়ে নাম সংশোধন করবেন। তবে তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশকে আরো আন্তরিক হওয়া দরকার। মাঝখান থেকে আমি হায়রানির শিকার হচ্ছি। ’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এসআই মাসুদ আল মামুন বলেন, ‘আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেও প্রথমে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ প্রাথমিক তদন্ত করেছেন এসআই নুরুল ইসলাম। বাদী যে অভিযোগে দিয়েছেন সে অনুযায়ী মামলা হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি আসামির নাম ভুল। ফলে আদালতে আবেদন করে নাম পরিবর্তন করে প্রকৃত আসামির নাম দেওয়া হবে। ’
বৃহস্পতিবার রাতে মুঠেোফোনে এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার এসআই নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনার প্রাথমিকভাবে তদন্ত আমি গিয়েছিলাম। ওই নারী যখন এফআইআর দেন তখন তো আমাদের নিয়ে দেননি। তিনি ভুল করতেই পারেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঠিক করে নেবেন। আপনি মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। ’
এ বিষয়ে আশুলিয়ায় থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে খতিয়ে দেখছি। নাম পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’ (সূত্র: কালের কন্ঠ)