আশুলিয়াদেশজুড়েস্থানীয় সংবাদ

আশুলিয়ায় গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যা; স্বামী আটক

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ঢাকার আশুলিয়ায় স্ত্রীর গায়ে গরম তেল ঢেলে হত্যার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

বুধবার সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকার আশুলিয়ার ওই ঘটনার আসামি মজনু মিয়াকে (৩৮) মঙ্গলবার মাঝরাতে কেরাণীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্ত্রী স্বর্ণা বেগমের (৩৫) গায়ে গরম তেল ঢেলে দেন মজনু। এর ১২ দিন পর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে মারা যান স্বর্ণা।

তার মা শিরিনা বেগম ১ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

সিআইডির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ২০০৭ সালে পারিবারিকভাবে মজনুর সঙ্গে বিয়ে হয় স্বর্ণার। বিয়ের পর তারা জামালপুরে মজনুর গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয় বাজারে মজনুর পোশাকের দোকান ছিল। তাদের ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে এবং দুই বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

“স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায়, সংসারের ভরণ পোষণ সঠিকভাবে না করায় এবং যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই নির্যাতন করায় তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল।”

এর আগেও যৌতুকের দাবিতে মারধর করে গুরুতর জখম করায় স্বর্ণার দুলাভাই মো. ময়নুল ইসলাম বাদী হয়ে মজনুর বিরুদ্ধে জামালপুরের সরিষাবাড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মজনু ২ মাস ১৯ দিন জেল খাটেন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় মজনু ও তার পরিবারের সদস্যদের আশ্বাসের ভিত্তিতে ময়নুল ইসলাম মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।

মুক্তা ধর বলেন, “কিন্তু কিছুদিন পরই স্বর্ণার উপর আবারও নির্যাতন শুরু হয়। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় ছয় মাস আগে সন্তানদের নিয়ে স্বর্ণা বেগম তার বাবা-মায়ের কাছে সিরাজগঞ্জে চলে যান।”

আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে স্বর্ণা তার সন্তানদের মায়ের কাছে রেখে আশুলিয়ার জিরানীতে ডরিন গার্মেন্টসে সহকারী হিসেবে প্রায় তিন মাস কাজ করেন।

সিআইডির পুলিশ সুপার বলেন, “এরপর মজনু মিয়া কৌশলে তার স্ত্রীর ঠিকানা সংগ্রহ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেখানে গিয়ে আবারও যৌতুকের দাবিতে ঝগড়া-বিবাদ শুরু করেন।

“যৌতুক দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর শরীরে গরম তেল ঢেলে দিলে শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়।”

তিনি জানান, তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়ে স্বর্ণাকে আশুলিয়ার জিরানী এলাকা থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলেও ভর্তি না করেই পালিয়ে যান মজনু।

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বর্ণাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ অক্টোবর ভোরে স্বর্ণা মারা যান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্বর্ণার শরীরের প্রায় ৫২ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মজনু মিয়া তার স্ত্রীর শরীরে গরম তেল ঢেলে হত্যার কথা স্বীকার করেছে,” বলেন সিআইডি কর্মকর্তা মুক্ত ধর।

/আরএইচএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close