আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
আশুলিয়ায় খাবারের বিষক্রিয়ায় মারা গেল কোটি টাকার মাছ (ভিডিও)
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশুলিয়ার জিরাবোতে বিষক্রিয়ায় একটি খামারের কোটি টাকার মাছ নিধনের অভিযোগ করেছে খামার মালিকরা । তবে পানিতে বিষক্রিয়া নয়, খাবারের বিষক্রিয়া ও অক্সিজেনের অভাবে মাছ মারা গেছে-ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমন ধারনা দিলেন সিনিয়র উপজেলা (সাভার) মৎস্য দপ্তরের ক্ষেত্র সহকারী (ফিল্ড এসিস্টেন্ট) হারুন-উর-রশিদ। এছাড়া এসব মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকা ও মাটিতে পুতে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সকালে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার দেওয়ান ইদ্রিস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকার প্রান প্রকৃতি এগ্রো মাছের খামারে এঘটনা ঘটে।
খামার মালিক শরিফুল ও শহিদুল ইসলাম দুই ভাই জানান, প্রায় ৪০ বিঘা জায়গা জুড়ে দীর্ঘদিন মাছ চাষ করে আসছি। গতকাল (১৩ আগস্ট) হঠাৎ মাছ পানিতে ভেসে বেড়াতে শুরু করে। পরে ৩০ থেকে ৪০ জন লোক নিয়ে কয়েকশ মণ মারা মাছ পানি থেকে তুলতে শুরু করেন। এই খামারে ১০ বছরের পুরোনো মাছও ছিলো। পানির নিচেও অনেক মাছ মরে পড়ে আছে।
তারা দাবী করেন, বিষ দিয়ে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে র্দুবৃত্তরা খামারে মাছ মেরেছে। যেখানে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করেন, সুষ্ট তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার।
তবে হারুন-উর-রশিদ জানান, প্রাথমিকভাবে পানিতে বিষক্রিয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তবে খাবারের বিষক্রিয়ায় মাছ মারা যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, যেহেতু পানিতে এমোনিয়া গ্যাস ও পিএইচ বা পানির ক্ষারীয় বেড়ে গেছে । সেই উপস্থিতি পানিতে দেখা গেছে। কেউ হয়তো ষড়যন্ত্রমুলক মাছের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়েছে । আবার অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে খাবার পানির নীচে জমে গিয়ে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়। ফলে মাছ সে খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আবার এমোনিয়া গ্যাসের ফলে পিএইচ বা পানির ক্ষারীয়তা বৃদ্ধি পেয়ে অক্সিজেন কমিয়ে ফেলে। ফলে খাবারে বিষক্রিয়া ও অক্সিজেনের অভাবে মাছ মারা যেতে থাকে। আবার পানিতে বিষের কোন গন্ধ পাওয়া যায়নি। তবে মাছের ল্যাব পরীক্ষার পরই বিষয়গুলো আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়া পানিতে বিষক্রিয়া হলে আশেপাশের মাছের খামারও ক্ষতিগ্রস্থ হতো। কিন্তু সেই লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, খামারীদের মতে এই খামারে প্রায় ৩০০ মণ মাছ মারা গেছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক কোটি টাকা। যেসব মাছ মারা গেছে সেগুলো অবশ্যই মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। এছাড়া এই মাছ কোন ভাবেই খাওয়া যাবে না। বিষক্রিয়া হয়ে মাছ মারা যায়, তাহলে মানুষ খেলেও তার শরীরে বিষক্রিয়ার সম্ভবনা থাকবে। যেহেতু আমাদের পরীরি নীরিক্ষার করা সুযোগ নেই। ফলে খামারীদের এসব মাছ সংগ্রহ করে ময়মনসিংহে পরীক্ষাগারে পাঠাতে হবে। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়া বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে। তিনি যে নির্দেশনা দিবেন। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জানান, প্রাথমিকভাবে অঅমরা জানতে পেরেছি, ক্ষতিগ্রস্থ এই খামারের পানিতে অক্সিজেন থাকার কথা, ৫ পিপিএম কিন্তু সেখানে আছে ২ পিপিএম। আবার এমোনিয়া গ্যাস থাকার কথা, ০.০৫-০.১ পর্যন্ত। কিন্তু সেখানে রয়েছে ০.৫০। যা অনেক বেশি। মাছের ঘনত্ব ও বেশি পরমিান খাবার দিলে নীচে জমে এমোনিয়া বিষাক্ত গ্যাস তৈরি। মাছ তখন আড়াই ঘুরান দিয়ে মারা যায়। আবার পিএইচ থাকার কথা, ৭.৫ থেকে ৮.৫। সেখানে ৯.২০ পাওয়া গেছে। যা অনেক বেশি। ফলে মাছ শরীরের সঠিক ব্যালেঞ্জ রাখতে পারে না। প্রাথমিকভাবে প্যারামিটারে পরীক্ষার এই ফলাফল পাওয়া গেছে। তবে ল্যাবে পরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ভিডিও দেখুন: