দেশজুড়েপ্রধান শিরোনামশিক্ষা-সাহিত্য
আমি কাজ করে যাচ্ছিঃ বুয়েট উপাচার্য
ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
বেঁধে দেওয়া সময় শেষে উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হন। নিজ কার্যালয়ের সামনে তিনি শিক্ষার্থীদের এসব কথা বলেন।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বুয়েটের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর তাঁরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিচ্ছিলেন তখন এক ছাত্রী সেখানে এসে বলেন, উপাচার্য ওই কার্যালয়ের ভেতরে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। শিক্ষার্থীদের সামনে না আসায় তখন উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটকেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা সেখানে ‘হইহই রইরই ভিসি স্যার গেল কই’ বলে স্লোগান দেন। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আংশিক কোনো দাবি মানা হবে না। এরপরই বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘দাবির সঙ্গে আমি একমত। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি।’ এ সময় এক শিক্ষার্থী জানতে চান, ‘স্যার, আপনি কী কাজ করছেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘তোমাদের এই ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করছি। আমি রাত একটা পর্যন্ত কাজ করেছি।’
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্রকাশ্যে আসেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সামনে না আসায় ক্ষোভ জানান শিক্ষার্থীরা। পরে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে উপাচার্য সশরীরে এসে এ বিষয়ে জবাবদিহি না করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। এরপরই সন্ধ্যা ছয়টার পর উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন।
গতকাল সোমবার উপাচার্য তাঁর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে একটি সভায়ও অংশ নেন। তবে যেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেই শেরেবাংলা হলে তিনি যাননি, এমনকি প্রকাশ্যেও দেখা যায়নি তাঁকে। তাঁর প্রকাশ্যে না আসার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা আজ সকালে উপাচার্যকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করার আহ্বান জানান।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয়, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও বুয়েটের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। তাঁরা জানান, আংশিক কোনো দাবি মানা হবে না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের দাবি মানা না হলে আগামী ১৪ অক্টোবর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
আবরার হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি
মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) হত্যার প্রতিবাদে সাত দফা দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলের আগে সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাবির বিষয়ে আলোচনা করে নেয় তাঁরা।
‘আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চাই’—ব্যানারে মিছিলটি বুয়েটের হলগুলো ঘুরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে আসেন। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের সুনির্দিষ্ট সাতটি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
সেগুলো হলো
১. খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের শনাক্ত করে সবার ছাত্রত্ব আজীবন বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি, তা তাঁকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে ডিএসডব্লিউ স্যার কেন ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছেন, এ বিষয়ে তাঁকে আজ বিকেল ৫টার মধ্যে সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
৫. আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনকে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।
৬. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. মামলা চলাকালে সকল খরচ এবং আবরারের পরিবারের সকল ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।