আশুলিয়াদেশজুড়েপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ
আগেই কাফনের কাপড় পরিহিত ছিলো সেই ছিনতাইকারী, হতবাক তদন্তকারী
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জন আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে এঘটনায় গণধোলাইয়ে সন্দেহভাজন নাজমুল মিয়া নামে এক ছিনতাইকারী মৃত্যুর ঘটনাও আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় আগেই পুরো শরীরে কাফনের কাপড় পরিহিত ছিলো নিহত নাজমুল মিয়া। এমন ঘটনায় হতবাক তদন্তকারী কর্মকর্তাও।
বুধবার (১৮ মে) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম। এর আগে রাতে সাভার ট্রাফিক বিভাগের পুলিশের এস আই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নাম ৩ থেকে ৪ জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। সোমবার ঘটনার রাতে এস আই হেলাল উদ্দিন ছিনতাইকারীকে বাসে দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে আটক করেছিলো সন্দেহভাজন ওই ছিনতাইকারীকে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ভুক্তভোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি ও বাসটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া গণধোলাইয়ে নিহতের ঘটনাও একটি মামলা দায়েরর প্রক্রিয়া চলছে।
মামলার বাদী এস আই হেলাল উদ্দিন বলেন, গত সোমবার রাত সোয়া ১০ টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাভার পরিবহনের একটি বাস যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। এ সময় ডিউটি শেষ করে সাভারে উদ্দেশ্যে সড়কে দাড়িয়ে আছি। যাত্রীদের চিৎকার শুনে পিছনে থাকা হানিফ বাসে উঠে একটু সামেন গিয়ে কবলিত বাসটি গতিরোধ করি। এসময় ছুরি হাতে ৩ জন বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে চলে যেতে দেখি। একটু কাছে যেতে দেখি বাসের ভিতরে একজন পুরো শরীরে দুই ভাগে কাফনের কাপড় পরিহিত ও ছুরি হাতে যাত্রীদের জিম্মী করে আক্রমন করার চেষ্টা করছে। আমাকে খেয়াল করেনি। আস্তে করে উঠে পিছন দিক থেকে একহাতে তার ছুরিটি ধরে ফেলি ও আরেক হাত দিয়ে গলা ঝাপটে ধরি। আমাকে হামলার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তি করে তাকে বাস থেকে নিচে নামিয়ে ফেলি। এসময় উত্তেজিত জনতা গণধোলাই দেয়। প্রায় ২০-২৫ জন যাত্রী ছিলো। যে যার মতো চলে যায়। সাভার পরিবনের বাসটি থামতে বললেও থামেনি। এর আগে গণপিটুনিতে ছিনতাইকারীর কাফনের কাপড় ছিড়ে যায়। ভিতরে জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি পড়া ছিলো। আমি আশুলিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করি। তারা ছুরিসহ কাফনের কাপড় জব্দ করে।
এসময় উপস্থিত উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন ওই ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত নাজমুল মিয়া রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার দক্ষিণপাড়া গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে। তিনি সাভার রাজফুলবাড়ীয়া সাকি পাড়া বড় ভাইয়ের সাথে বসবাস করে আসছিলো।
নিহতের বড় ভাই গার্মেন্টস শ্রমিক মঞ্জু মিয়া মুঠোফোনে বলেন, আমি কি বুঝতে পারছি না। নাজমুল সাভারে রিকশা ভ্যানে করে বিভিন্ন খেলা বিক্রি করতো। ৮ থেকে ৯ বছর এখানে বসবাস করতো। আমার পাশের ঘরে নামজুল তার স্ত্রীসহ থাকতো। গত ৩ দিন আগে তার বউ বাড়ি চলে যায়। সোমবার রাতে বাসে কোথায় গিয়েছিলো এমন প্রশ্নে মঞ্জু বলে আমি জানি না কোথায় ছিলো।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এসআই শ্যামল বলেন, কাফনের কাপড় পরিহিত ছিলো কেন? আমাদেরও অবাক করেছে বিষয়টি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, খুব এগ্রেসিভ চিন্তা ভাবনা থেকে এমন ঘটনা। সে গার্মেন্টস কর্মী ছিলো পড়ে চাকরি ছেড়ে ফেরি করে খেলনা বিক্রি করতো। তার বিষয়ে আমরা কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত বাকী আসামীদের গ্রেফতার করতে পারবো।
/এএস