করোনাস্বাস্থ্য

“আইসিসিবি হাসপাতালটি হবে করোনা চিকিৎসায় বড় সাপোর্ট”

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দেশের বৃহত্তম হাসপাতালটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা শুধু চিকিৎসাসেবা শুরুর। এ অবস্থায় গতকাল হাসপাতালটির নির্মাণ অগ্রগতি পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই মাসের শেষেই এখানে চিকিৎসাসেবা শুরু করতে পারব। দুই হাজারের বেশি বেড, ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা মিলিয়ে এই হাসপাতালটি হবে করোনা চিকিৎসায় অনেক বড় সাপোর্ট। দেশের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এত বড় হাসপাতাল করার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ।

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

স্বাস্থ্য সচিব বলেন, এখানে ২০১৩টি বেড নিয়ে থাকছে অনেক সুবিধা। এটি আমাদের অন্যতম বড় একটি আইসোলেশন সেন্টার। এখানে একসঙ্গে অনেক রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এটা অনেক বড় সাপোর্ট। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখানে অন্যান্য সুবিধা ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি এই মাসের শেষেই এখানে চিকিৎসাসেবা শুরু করতে পারব।

তিনি বলেন, আক্রান্তের চিকিৎসার পাশাপাশি আমরা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। চিকিৎসক ও নার্সদের যাতে কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকে সেই বিষয়টি মাথায় নিয়েই এখানে চিকিৎসা কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কীভাবে হাসপাতালে যাবে, কীভাবে রোগী দেখবে, তাদের কীভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকেই প্রটোকল করা হয়েছে। পালাক্রমে রোস্টারের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে গুরুত্ব দিচ্ছি। এখানে প্রাথমিক পরিচর্যা কেন্দ্রের মতো করেছি। অক্সিজেন সুবিধা থাকবে। প্রয়োজন হলে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তো আছেনই। বসুন্ধরা হাসপাতাল চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী আনা হবে কি-না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, কত রোগী আক্রান্ত হচ্ছে, কেমন আক্রান্ত হচ্ছে, মূলত আক্রান্তের প্রখরতা দেখে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সরোয়ার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হামিদ, নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সরোয়ার বলেন, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। গত কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ ছিল। আশা করছি বাকি ১০ শতাংশ কাজ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পরিকল্পনা করা হচ্ছে কোথায় অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা যায়। এটা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই দ্রুত স্থাপন করা হবে।

তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এ ছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close