স্বাস্থ্য

আইনে কিডনি প্রতিস্থাপনের সুব্যবস্থা নেই: ডা. জাফরুল্লাহ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ২০১৮ সালের সংশোধিত ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’ এ কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে কোনো সুব্যবস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, কেউ যদি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার রাখে তাহলে সুস্থ সবল মানুষেরা দুটো কিডনি থেকে একটি দান বা বিক্রি করে দেওয়ার অধিকার রাখে। এজন্য কিডনি দাতা ও গ্রহীতার কোনো সমস্যা হয় না। তবে সংশোধিত আইনে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে কোনো সুব্যবস্থা নেই।

বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

‘২০১৮ সালের সংশোধিত মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ এর অসম্পূর্ণতা ও সমস্যা সম্পর্কে অবহিতকরণে’র উদ্দেশ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের কিডনি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। এটা বড় কোনো অপারেশন নয়। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপন করে। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিপরীতে যে চিকিৎসাটি রয়েছে সেটা হলো ডায়ালাইসিস, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

‘এতে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়। অথচ আমাদের দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষেরা। যাদের এত টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই। এক্ষেত্রে যদি প্রতিস্থাপনের দিকে যাওয়া হয় তাহলে দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ হয় মাত্র দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।’

তিনি বলেন, প্রতিস্থাপনের একবছর পর্যন্ত প্রতিমাসে দুইহাজার টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। আর যদি ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে ওষুধের দাম হবে মাত্র ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাংযোজন আইন প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালের সংশোধিত মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ এর পরিধি অত্যন্ত সীমিত ও সংকীর্ণ। কিডনি প্রতিস্থাপনের কোন সুব্যবস্থা আইনে নাই।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, এই আইনে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। উন্নত দেশসমূহ ও ইরানের মতো সুস্থ জাতীয় ও অনাত্মীয় সবার অঙ্গদানের সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের আশেপাশের দেশগুলোতেও আইন এ ধরনের অধিকার হরণমূলক নয়।

বাংলাদেশ ও এ চিকিৎসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, দেশে প্রতিবছর ১০ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। কিন্তু দেশে হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টি। যেখানে রোগীরা আইনের ভয়ে দানকারীকে মিথ্যা সম্পর্কে নিকটাত্মীয় বানিয়ে নেয়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিকল কিডনি রোগী ভারত ও শ্রীলঙ্কায় গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করায়, এতে প্রতিজনের ৩০ লাখ টাকার অধিক ব্যয় হয়।

‘ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। সেখানে এক থেকে তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশি রোগীরা কেবলমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করেন৷ অপরপক্ষে প্রত্যেক জীবিত দাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দিলে সরকারের ব্যয় হবে ৫০০ কোটি টাকা। জনগণের অর্থ সাশ্রয় হবে ৩০০ কোটি টাকা। সঙ্গে দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হবে।’

আগামী বছর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হলে গরিদের খরচ হবে দেড় লাখ এবং ধনীদের জন্য আড়াই লাখ টাকা লাগবে। তাছাড়া কৃত্রিম কিডনি (মেশিন) বাংলাদেশে সহজলভ্য হতে আরো ১০ বছর লেগে যেতে পারে। আর বর্তমানে প্রায় ১০ জন সার্জন রয়েছেন দেশে।

প্রতিস্থাপন চালু হলে এ সংখ্যাকে ১০০ জনে দাঁড় করাতে একবছর সময় লাগবে বলেও মনে করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close